শুক্রবার দুই কোরিয়ার মধ্যকার যুদ্ধবিরতির ঐতিহাসিক স্থান পানমুনজামে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফলপ্রসূ এ বৈঠকের প্রশংসা করেছেন বিশ্ব নেতারা।
কিন্তু শুক্রবারের এই ঐতিহাসিক আয়োজনের পেছনে যে মানুষটি মূল ভূমিকা পালন করেছেন তিনি হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান শুহ হুন। শুধু গতকালের বৈঠক নয়, এর আগে উল্লিখিত যে দুটি বৈঠক হয়েছে দুই কোরিয়ার মধ্যে তারও নেপথ্য আয়োজক ছিলেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এক দশকেরও বেশি সময় পর দুই কোরিয়ার মধ্যে এই আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলো। কোরিয়া যুদ্ধে দুই ভাগ হওয়ার পর এর আগে ২০০০ ও ২০০৭ সালে উভয়পক্ষের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়।
শুক্রবার বৈঠক শেষে যখন মুন ও কিম ঐতিহাসিক যৌথ ঘোষণা দেন তখন তাদেরই পেছনে নীরবে চোখের পানি মোছেন শুহ হুন।
১৮ বছর আগে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে যখন প্রথম বৈঠক হয় সেটিও আয়োজনের পেছনে ভূমিকা রাখেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তখন বৈঠক হয় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং ইল (উনের বাবা) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে জংয়ের মধ্যে।
আর ২০০৭ সালের বৈঠক হয় কিম জং ইল ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট রোহ মু হেইয়ুনের মধ্যে। এটিও পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও মূল ভূমিকা পালন করেন শুহ হুন।
এরপর দক্ষিণ কোরিয়ায় রক্ষণশীল সরকার ক্ষমতায় আসায় পদত্যাগ করেন শুহ হুন। কিন্তু এক বছর আগে উদারপন্থী মুন ক্ষমতায় আসার পর শুহকে আবারো জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থায় ফিরিয়ে আনেন এবং তাকে বাহিনীর প্রধান করেন। সেইসঙ্গে এটাও বলেন যে, তিনি (শুহ) হচ্ছেন দুই কোরিয়ার সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে সঠিক ব্যক্তি।
নতুন করে দায়িত্ব পাওয়ার পর চলতি বছরের মার্চ মাসে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে পিয়ংইয়ং সফর করেন শুহ। ২০১১ সালে পিতার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসা উত্তর কোরিয়ার তরুণ নেতা কিমের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম কোনো প্রতিনিধি হিসেবে তিনিই সাক্ষাৎ করেন।
ওই বৈঠকে কিম শুধু মুনের সঙ্গে দেখা করতেই রাজি হননি, বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গেও বৈঠক করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেন। শুহ এরপর একটি মার্কিন প্রতিনিধি দলের পিয়ংইয়ং সফরের ব্যবস্থা করেন। এরই প্রেক্ষিতে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান (বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মাইক পম্পেও পিয়ংইয়ং সফর করেন।
এরই অংশ হিসেবে মে মাসের শেষ নাগাদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং উনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।