বহু বছর ধরে ইয়েমেনের নির্মম গৃহযুদ্ধ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে আমেরিকান সামরিক বাহিনী। স্থানীয় হুতি বিদ্রোহী ও সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর মধ্যকার লড়াই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো ঝুঁকি প্রদর্শন করেনি। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানে পরিবর্তন আসে। মার্কিন সামরিম বাহিনীর স্পেশাল ফোর্সেস ‘গ্রিন বেরেট’ এর কয়েক ডজন সদস্য ইয়েমেন সংলগ্ন সৌদি সীমান্তে পৌছায় হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। যুক্তরাষ্ট্রের গোপন যুদ্ধের তালিকায় যোগ হয় ইয়েমেনের নাম। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সম্প্রতি গ্রিন বেরেট অভিযান সম্পর্কিত নথিপত্র পত্রিকাটির কাছে হস্তান্তর করেছে মার্কিন কর্মকর্তা ও ইউরোপীয় কূটনীতিকরা। কিন্তু এত দিন জনসম্মুখে ইয়েমেনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কিছুই জানায়নি মার্কিন প্রশাসন। বর্তমানে মোতায়েনরত সেনারা সেখানে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে যে নথিপত্রগুলো আছে সেগুলোর সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অনুসারে, ইয়েমেনে মার্কিন সহায়তা কেবল সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমানগুলোয় জ্বালানি ভরে দেয়া, দিক-নির্দেশনা দেয়া ও গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু ময়দানে সেনা মোতায়েন করার মানে হচ্ছে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি পশ্চিমা সহায়তা বৃদ্ধির অকাট্য প্রমাণ।
ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেট সিনেটর ও আর্মড সার্ভিস কমিটির সদস্য টিম কেইন বৃহস্পতিবার গ্রিন বেরেট অভিযানটিকে, ‘প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সহায়তা এবং লড়াইয়ের মধ্যকার লাইনটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্পষ্ট করে দেয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি দ্য টাইমসের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করেন এবং ইয়েমেনে সামরিক শক্তি প্রয়োগের কর্তৃত্ব নির্ধারণের জন্য নতুন করে কংগ্রেসে ভোটদানের আয়োজন করার আহ্বান জানান।
জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার ঘাটি হিসেবে ব্যবহার হওয়া ছাড়াও ২০১৪ সাল থেকে এক প্রাণঘাতী গৃহযুদ্ধে জরিয়ে আছে ইয়েমেন। বর্তমানে দুপক্ষের মধ্যে লড়াই চলছে। দুপক্ষ হচ্ছে, স্থানীয় হুতি বিদ্রোহী ও সৌদি-নেতৃত্বাধীন জোট। হুতি বিদ্রোহীরা ইরান ও হিজবুল্লাহ সমর্থিত। তারা ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগী, প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদির সরকারের পতন ঘটিয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বোমা হামলা চালানো শুরু করে সৌদি নেতৃতাত্বধীন জোট। পাল্টা জবাবে সৌদি রাজধানী রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আসছে হুতিরা। তবে এখন পর্যন্ত হুতিরা এমন কোনো কিছু করেনি যা থেকে প্রমাণ মেলে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সরাসরি হুমকি। তারা একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী যাদের ইয়েমেনের বাইরে কোনো ঘাঁটি নেই। নেই কোনো অভিযানও। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র এখনো গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেনি।