ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আগে না রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আগে? নিশ্চিতভাবে আগামী দশকের মহাগুরুপূর্ণ বিতর্ক হতে চলেছে।
সময়কে এখন নিয়ন্ত্রণ করছে ইন্টারনেট, সঙ্গে আমাদেরকেও। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি বিশ্বের সঙ্গে আমাদেরও পাল্লা দিয়ে ছুটতে হচ্ছে। যে গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটতে পারবে সে এগিয়ে যাবে, অন্যরা মুহূর্তেই পিছিয়ে পড়বে।
তাই ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে এই সময়ে টিকে থাকা কার্যত অসম্ভব। আবার অনলাইনের কৃপায়! আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে যাচ্ছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জায়গা আর সুরক্ষিত থাকছে না, আমার ব্যক্তিগত তথ্য হয়ে যাচ্ছে মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি! যার জেরে ফেসবুকের মতো টেক জায়ান্টের প্রতিষ্ঠাতাকে আদালতের মুখোমুখি হয়ে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন এর ব্যবহারকারীদের অনেকেই।
খোদ আমেরিকানদের মধ্যে ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির দায়ে ‘ডিলিট ফেসবুক’ আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। এতে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, ব্যক্তিগত তথ্যের প্রশ্নে মানুষ কতটা সংবেদনশীল।
অন্যদিকে অনলাইনে ব্যবহারকারীদের স্বেচ্ছায় দেওয়া তথ্য নিয়ে কত বড় ‘কালোবাজার’ তৈরি হয়েছে তার প্রমাণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া। এটা এখন প্রমাণিত সত্য যে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল অনলাইন ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের তথ্য।
বর্তমানে অনলাইনে সরবরাহকৃত তথ্য ও এর নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেন ইন্টারনেট অঙ্গনে সুনামি বইয়ে দিয়েছিলেন তার উইকিলিক্সের মাধ্যমে। তার প্রকাশিত গোপন নথি থেকে জানা যায় কীভাবে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অগণিত মানুষের মোবাইল ফোন কল, ই-মেইল, টেক্সট মেসেজ প্রতিদিন ফলো করে।
শুধু আমেরিকা নয়, প্রত্যেক দেশই তাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যেকোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংশ্লিষ্ট এজেন্সির কাছে চাইতে পারে। এতে নড়েচড়ে বসেছেন ব্যবহারকারীরা, সচেতন হয়েছেন তথ্য নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে।
২১ শতকে আমাদের সব তথ্য ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ডিজিটাল নাগরিকদের কি সামনের দিনগুলোতে তথ্য গোপনীয়তার অধিকারের সঙ্গে আপোস করতে হবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে?
আমরা এখন একটি যুদ্ধকালীন যুগ পার করছি। ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী আক্রমণ সারা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তুলছে, এমতাবস্থায় প্রত্যেক দেশ তাদের নিজ নিজ নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সন্ত্রাসী ঝুঁকি কমানোর জন্য সর্বসাধারণের ওপর নজরদারি জরুরি। অ্যামেরিকান সংবিধানে ‘সিকিউরিং জেনারেল ওয়েলফেয়ার’ অ্যাক্টে উল্লেখ করাই আছে, privacy is only defended in amendments, national security should be prioritized over any concerns for personal privacy।
তা ছাড়া দিনে দিনে সাইবার সন্ত্রাসের ঝুঁকি বিশ্বব্যাপী যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের আরও ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের এক্সেসে চলে আসতে আরে নিরাপত্তার অজুহাতে। উভয় সংকটে সম্ভবত এর প্রান্তিক ব্যবহারকারীরা। একটির জন্য আরেকটি ছাড় দিতে হবে।
একদিকে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা চাইলে আপনার জীবনের ঝুঁকি বাড়বে, অন্যথায় গোপনীয়তার অধিকারের সঙ্গে আপোস করতে হবে।
এবার ভাবুন আপনি কী করবেন? এখনই সিদ্ধান্ত নিন!