1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
কেঁচো সারের ফেরিওয়ালা - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত বিএনপির প্রতিটা নিঃশ্বাস যেন খুঁজছে তোমায়: পূজা চেরি প্রযোজককে এসিড নিক্ষেপের হুমকি, চিত্রনায়িকা পলির বিরুদ্ধে জিডি ছেলেদের সৌন্দর্য কিসে, জানালেন জায়েদ নিপুণের আবেদনে পেছাল ভোটের তারিখ, অসন্তুষ্ট মিশা ফরজ গোসল না করে সেহরি খেলে কি রোজা হবে? ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিও, কোন সম্পর্কের ইঙ্গিত দিলেন বুবলী-রাজ রোজা রাখলে পাবেন ৫ উপকার ‘রিয়াজ এখন নিপুণের চামচা হয়ে গেছে, এটা খুব কষ্টের’ মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রশ্নে যা বললেন ওবায়দুল কাদের বেশি কথা বললে সব রেকর্ড ফাঁস করে দেব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘খালেদা জিয়া একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা’ রিজভীর ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলা নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের বুর্জ খলিফায় শাকিবের সিনেমার প্রচারে ব্যয় কত? বুবলী-পরীমনির দ্বন্দ্বের মাঝে অপু বিশ্বাসের রহস্যময় স্ট্যাটাস

কেঁচো সারের ফেরিওয়ালা

  • Update Time : শনিবার, ১২ মে, ২০১৮
  • ৪৯৮ Time View

হান্নান প্রধান ছিলেন দিনমজুর। অভাব তাড়াতে পেশা বদলে হয়েছিলেন রিকশাচালক। অভাব তাঁকে ছাড়েনি। তবে অভাব তাঁকে অদম্য করে তুলেছে। টানা পরিশ্রমে নিজেকে তিনি অনন্য, অনুকরণীয় করে তুলেছেন অনেক কৃষকের কাছে।
হান্নান প্রধান ছিলেন দিনমজুর। অভাব তাড়াতে পেশা বদলে হয়েছিলেন রিকশাচালক। অভাব তাঁকে ছাড়েনি। তবে অভাব তাঁকে অদম্য করে তুলেছে। টানা পরিশ্রমে নিজেকে তিনি অনন্য, অনুকরণীয় করে তুলেছেন অনেক কৃষকের কাছে।

হান্নান প্রধানের (৪৪) বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে। তিনি কেঁচো সার উৎপাদন করেন। বিক্রি করেন। কাবিলপুর বাজারে তাঁর একটি সারের দোকানও আছে। কিন্তু তিনি নজর কেড়েছেন তাঁর গানের দলের জন্য। গ্রামে গ্রামে ঘুরে নেচে-গেয়ে তিনি রাসায়নিক সারের কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন। কেঁচো সার বিক্রি করছেন। কিষান-কিষানিদের কেঁচো সার তৈরির পদ্ধতি শেখাচ্ছেন। আর নিজের জমিতে এই সার দিয়ে চাষাবাদ করছেন।

হান্নান প্রধানের দল এখন প্রতি শুক্রবারে গ্রামে বের হয় গান নিয়ে—‘শোনেন বাংলার চাষি ভাই, সবারে জানাই/ কেঁচো সারের বিকল্প নাই।/ শতকপ্রতি চার কেজি ব্যবহার করিলে ফসল হবে বাম্পার/ এই ফলন দেখিয়া মন উঠবে ভরিয়া।/ আনন্দতে নাচবে রে ভাই কৃষকের মন।…’

কাবিলাবাজারে নিজের ‘কেঁচো সারের দোকান’, নিজের বাড়ি, আর গানের আসরে হান্নান কেঁচো সার তৈরি ও ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের এনে তাঁর কর্মকাণ্ড দেখাচ্ছেন। সবাইকে তিনি একটি কথাই বলছেন, ‘জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করা ঠিক নয়। কেঁচো সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়, জমির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।’

এ পর্যন্ত অন্তত আট শ কৃষককে সার তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন হান্নান। ৩ লাখ ৪০ হাজার কেঁচো বিনা মূল্যে দিয়েছেন তাঁদের। এখন এই উপজেলার অন্তত তিন শতাধিক কৃষক কেঁচো সার বিক্রি করে সংসার চালায়।

উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে ১৬ কিলোমিটার দূরে হান্নানের বাড়ি। কাঁচা-পাকা সড়ক ধরে গ্রামটিতে যাওয়ার পথে নানা ধরনের সবজিখেত চোখে পড়ে। হান্নানের বাড়িতে পৌঁছে জানা গেল, তিনি বাড়িতে নেই। কাবিলপুর বাজারে দোকানে আছেন। দোকানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলছেন।

সেখানে জামালপুর গ্রামের সবজিচাষি আবদুল খালেক বলেন, ‘হান্নান ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিই। নিজের তৈরি সার দিয়া ফসল ফলাই।’ মশিয়ার রহমান বলেন, ‘ফসল ফলাইতে হামার এলা রাসায়নিক সার, ওষুধ নাগে না, খেতোত কেঁচো সার দেই, ওষুধের বদলে সেক্স ফেরমোন ফাঁদ বসাই।’

কষ্টের অতীত

তবে আজকের মতো এত ফুরফুরে ছিল না হান্নানের জীবন। নয় ভাইবোনের মধ্যে হান্নান পঞ্চম। বাবা খেজুর উদ্দিনের অভাবের সংসার, তাই লেখাপড়া করা হয়নি। দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। কাজ পেলে খাবার জুটত, না পেলে অনাহার। একসময় রিকশা চালানো শুরু করেন। এভাবে কয়েক বছর সংসারের ঘানি টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি।

২০১১ সালের জুন মাসের কোনো একদিন ঝড়-বৃষ্টির কারণে দিনমান বসে থেকেও ভাড়া পাননি হান্নান। পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে রিকশায় মাথা নিচু করে বসে ছিলেন ছলছল চোখে। এ সময় রংপুর যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে আসেন পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম। হান্নানের কষ্টের কথা শুনে হাতে ২০০ টাকা তুলে দিয়ে পরদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

হান্নান পরদিন কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখেন সাত-আটজন কৃষক বসে আছেন। কৃষি কর্মকর্তা তাঁদের বলছেন অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় তাঁদের খেতের মাটির রং লাল হয়ে গেছে। একসময় জমিতে ফসল ফলবে না। একপর্যায়ে সালাম দিয়ে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢোকেন হান্নান। কৃষি কর্মকর্তা তখন কেঁচো সার তৈরির পদ্ধতি এবং এ সার ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে বলেন তাঁদের।

হান্নানের আগ্রহ দেখে কৃষি কর্মকর্তা তাঁকে আইএপিপি প্রকল্পে (অ্যাগ্রিকালচারাল ইন্টিগ্রেটেড প্রডাক্টিভিটি প্রজেক্ট) সদস্য করে নেন। হান্নান কেঁচো সার তৈরির কৌশল শেখেন।

কেঁচো সার তৈরি করার জন্য প্রথমে উঁচু একটা স্থান নির্ধারণ করতে হবে। মাটিকে ভালোভাবে পিটিয়ে শক্ত করে ওপরে পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে। পলিথিনের ওপর দুটি স্যানিটারি রিং অথবা আড়াই ফুট দৈর্ঘ্য, দুই ফুট প্রস্থ ও এক ফুট গভীর করে ইট দিয়ে মাটির নিচে পাকা হাউস তৈরি করে নেওয়া যাবে। তার ওপর টিন, খড় বা পলিথিন দিয়ে চালা দিতে হবে। দুই রিংয়ের মধ্যে এক ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁকা রাখতে হবে, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। আর ইটের হাউস হলে দেয়ালে এক ফুট পরপর এক ইঞ্চি প্লাস্টিক পাইপ বসাতে হবে। রিং বা হাউসে তাজা গোবর ভরাট করে এক সপ্তাহ রাখতে হবে।

সাত দিন পর রিংয়ে ৩০০টি কেঁচো আর ইটের হাউস হলে ৪০০টি কেঁচো ছাড়তে হবে। এরপর রিং বা হাউসের মুখ চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। দুই মাস পর চটের ঢাকনা খুলে দেখতে হবে, যদি গোবর চা-পাতার মতো আলগা আলগা হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে, সার হয়ে গেছে।

হান্নান বাড়ির উঠানে চারটি স্যানিটারি রিং বসান। সকাল-বিকেল মাঠে ঘুরে তাজা গোবর সংগ্রহ করেন। তারপর কেঁচো এনে রিংয়ের মধ্যে ছেড়ে দেন। দুই মাস পর ৪টি রিং থেকে ২০০ কেজি কেঁচো সার পান। সঙ্গে ৬০০ কেঁচোর বাচ্চা। সার ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন ৩ হাজার টাকা। প্রতি কেঁচো ৫০ পয়সা করে বিক্রি করে পান ৩০০ টাকা। হান্নানের চোখ খুলে যায়। তিনি ইট দিয়ে মাটির নিচে হাউস তৈরি করে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। হান্নানের সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানও লেগে পড়েন।

২০১২ সাল শেষে সার ও কেঁচো বিক্রি করে এক লাখ টাকা জমা করেন। এ টাকা দিয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে দুই একর জমি বর্গা নেন। তাতে শসা, লাউ, শিম, করলা চাষ করেন। সেখানে ব্যবহার করেন নিজের তৈরি কেঁচো সার। ফলন ভালো হয়। সবজি বিক্রি করে পান দেড় লাখ টাকা। এভাবে আয় বাড়ে, চাষের জমি বাড়ে। সার, কেঁচো ও সবজি বিক্রির টাকায় কেনেন এক একর জমি।

সময় বয়ে যায়। হান্নানের ঘরে টিনের চাল ওঠে। হয় গোসলখানা। বাড়িতে উঠেছে ইটের সীমানাপ্রাচীর ও গেট। গোবর যাতে কিনতে না হয়, সে জন্য ছয়টি বিদেশি জাতের গাভি কিনেছেন। হয়েছে ১৫টি ছাগলের একটি খামার। বছরে সার, কেঁচো, সবজি, ছাগল, মুরগি বিক্রি করে এখন আয় দুই লাখ টাকা। বড় মেয়ে ফেরদৌসিকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে তুহিন ইসলাম এখনো ছোট।

দিনবদলের বাতাস লাগে সবখানে

চার বছর ধরে গ্রামে ঘুরে প্রায় আট শ কিষান-কিষানিকে কেঁচো সার তৈরির কৌশল শিখিয়েছেন হান্নান। কেঁচো থেকে সার আলাদা করার জন্য তিনি তিনটি মেশিন, জমিতে নিড়ানির জন্য একটি ও সেচ দেওয়ার জন্য দুটি মেশিন কিনেছেন। দুই বছর ধরে আশপাশের কৃষকেরাও তাঁর এই যন্ত্রগুলো ধার নিয়ে ব্যবহার করছেন। আমপুর গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন, সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন জানান, আগে সেচযন্ত্র ও কেঁচো সার আলাদা করার যন্ত্রের জন্য টাকা গুনতে হতো। এখন বিনা টাকায় হান্নানের কাছ থেকে সব পাওয়া যায়।

চার বছর আগে জাহিদপুর গ্রামের মমিনুল ইসলামকে সবাই দিনমজুর হিসেবে চিনত। ছিল ৪ শতক জমির ওপর ছোট্ট একটা খড়ের ঘর। এখন মমিনুলের ঘরে সারা বছর চাল থাকে। টিনের ঘর করেছেন। নিজের কেনা ৪০ শতাংশ জমিতে এবার কেঁচো সার দিয়ে বেগুনের চাষ করে আয় করেছেন ৪১ হাজার টাকা।

নিজ কাবিলপুর গ্রামের জিয়াউর রহমান, শেরপুর গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন, শ্রীরামপুর গ্রামের এনামুল হক—সবার গল্প কমবেশি একই রকম।

টুকনিপাড়া গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম দুই মাস পরপর ৩০০ কেজি করে সার তৈরি করছেন। এখন আর খেতে তেমন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হচ্ছে না। তিনি জানান, আগে গোবর বাড়ির এখানে-সেখানে ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট হতো। কেঁচো সার তৈরি শুরু করায় বাড়ির পরিবেশেও ভালো থাকছে। সবজির ফলনও ভালো হচ্ছে। রাসায়নিক সারের ওপরও চাপ কমে যাচ্ছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র বলেন, ‘আমি হান্নানের কর্মকাণ্ড স্বচক্ষে দেখেছি। তাঁর পরামর্শে কাবিলপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০০ কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেঁচো সার তৈরি করছেন। অন্য ইউনিয়নের কৃষকদেরও আমরা এ সার কিনে ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ, কেঁচো সার জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়, মাটির গঠন উন্নত করে। উৎপাদিত ফসলের গুণগত মানও ভালো হয়।’

হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, কেঁচো সার নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চান তিনি। আর হান্নানের স্ত্রী তহমিনা বেগম বলেন, একদিন তাঁদের কোনো পরিচয় ছিল না। এখন তাঁরা সফল কৃষক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com