চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার জঙ্গল মহাদেবপুর পাহাড়ের ত্রিপুরা পাড়ায় আদিবাসী দুই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে নিহত কিশোরী ছবি রাণী ত্রিপুরার (১৪) বাবা সুমন ত্রিপুরা বাদী হয়ে সীতাকুন্ড থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে স্থানীয় চৌধুরী পাড়ার ইসমাইল হোসেনের পুত্র আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ সীতাকুন্ড পৌরসভার জঙ্গল মহাদেবপুর পাহাড়ের ত্রিপুরা পাড়া থেকে ফলিন ত্রিপুরার মেয়ে সুখলতি ত্রিপুরা (১৫) ও সুমন ত্রিপুরার মেয়ে ছবি রাণী ত্রিপুরার (১১) মরদেহ উদ্ধার করে। তারা দুজন বান্ধবী।
সীতাকুন্ড থানার এএসআই মো. হানিফ বলেন, ত্রিপুরা পাড়ার আদিবাসী দুই কিশোরীকে ধর্ষণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।মামলায় আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
সীতাকুন্ড থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল হক বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে লাশ দুটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার পর সুমন ত্রিপুরা মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদি সুমন ত্রিপুরার দাবী প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় চৌধুরী পাড়া এলাকার বখাটে যুবক আবুল হোসেন (২৪) ও তার সঙ্গীরা ধর্ষনের পর পরিকল্পিতভাবে দুই কিশোরীকে হত্যা করেছে। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে বখাটেরা দুই কিশোরীর মুখে বিষ ঢেলে বসতঘরের একটি কক্ষে দুজনকে একসাথে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে।
নিহত সুখলতি ত্রিপুরার বাবা পুনেল কুমার ত্রিপুরা জানান, বিগত একমাস ধরে চৌধুরী পাড়ার ইসমাইল হোসেনের পুত্র আবুল হোসেন তার বখাটে সঙ্গীদের সাথে নিয়ে ত্রিপুরা পল্লীতে গিয়ে আমার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এতে সুখলতি অসম্মতি জানালে বখাটে আবুল হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে সপ্তাহখানেক আগে সুখলতিকে তার হাতে তুলে দিতে আমার উপর চাপ প্রয়োগ করে।
এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে আবুল হোসেন আমার মেয়েকে অপহরণ ও হত্যার হুমকি দেয়। গতকাল আমাদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে আমার মেয়ে সুখলতি ও তার বান্ধবী রাণীকে হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে এবং পরবর্তীতে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আতœহত্যার নাটক সাজিয়েছে।
ত্রিপুরা পল্লীর বাসিন্দারা জানান, সকালে জুমচাষের জন্য কিশোরী সুখলতি ও ছবি রানীকে ঘরে রেখে তার বাবা, মা পাহাড়ে চলে যান। বিকালে নিজ ঘরে ফেরার পর পুনেল ত্রিপুরার বসতঘরের একটি কক্ষে দুই কিশোরীকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে সুখলতির মায়ের আর্তচিৎকারে আশপাশের প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
এ বিষয়ে সীতাকুন্ড উপজেলা আদিবাসি ত্রিপুরা পরিষদের সাধারণ স¤পাদক রবীন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, এভাবে দুটি মেয়ে বিষপানে আতœহত্যা কোনভাবে সম্ভব নয়। গত কয়েকদিন ধরে সুখলতি ত্রিপুরাকে যেই ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল, সেই আজ পরিকল্পিতভাবে সুকুলতি ও তার বান্ধবী রাণীকে হত্যা করেছে। আমরা এই বিষয়ে আইনের সহায়তা কামনা করছি।