যশোর ও ঝিনাইদিহে বন্দুকযুদ্ধে ৪ মাদক ব্যবসায়ীর নিহতের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে যশোরে নিহতের সংখ্যা ৩ এবং ঝিনাইদহে ১। পুলিশ বলছে এরা সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
যশোরের ঘটনায় পুলিশের ভাষ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলিতে তিনজনের নিহতের ঘটনা ঘটে।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদা জানান, গভীর রাতে সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা ও মন্ডলগাতি গ্রামের মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের খবর পায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স গেলে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ আর দুটি শাটারগান ও দুই রাউন্ড গুলির খোসা।
অন্যদিকে, একই ধরনের ঘটনা ঘটে সদর উপজেলার তরফনওয়াপাড়া গ্রামের জনৈক নওয়াব আলীর মেহগনি বাগানে।সেখানে হাজির হয়ে পুলিশ দুটি মরদেহ, দুটি পিস্তল, দুই রাউন্ড তাজা গুলি, গুলির খোসা এবং ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। মরদেহ তিনটি আজ সোমবার ভোর চারটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার কল্লোল কুমার সাহা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। গত ৩ দিনে যশোরে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপুর এলাকার র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ছব্দুল মন্ডল (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি নরেন্দ্রপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। এসময় র্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী নাইন এমএম পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ পিস ইয়াবা ও একটি হেলমেট উদ্ধার করেছে।
ঝিনাইদহ র্যাব-৬ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এএসপি গোলাম মোর্শেদের ভাষ্যমতে, গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১.৩০টার সময় র্যাব-৬ এর একটি টহল দল নরেন্দ্রপুর গ্রামের মাঠে চেকপোষ্ট বসিয়ে টহলরত ছিল। এ সময় মাদকের চালান নিয়ে ছব্দুল মন্ডল ও তার সহযোগিরা মটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। র্যাব সদস্যরা এ সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করলে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। র্যাব ও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে ছব্দুল মন্ডল নিহত হন। বাকি মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এসময় র্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী নাইন এমএম পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ পিস ইয়াবা ও একটি হেলমেট উদ্ধার করে। কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান বলেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহতের লাশ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্যন মরদেহ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইমান আলী (২৮) নামের এক মাদক স¤্রাট নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার ঘোড়াশাল খালিশারটেক এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় র্যাবের দুই সদস্য আহত হন। ইমান আলীর বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার নাগরিয়া কান্দি গ্রামে। র্যাবের দাবি, নিহত ইমান আলী নরসিংদীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। ‘ইমান আলী শুধু মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না, সে জেলার মাদক নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত ছিল। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, বিস্ফোরক, অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ডজন খানেক মামলা রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের পর ইমান আলীর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল,গুলিসহ বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব ১১ এর কম্পানি কমান্ডার মো. জসিম উদ্দিন জানায়, ইমান আলী ঘোড়াশালের খালিশারটেক এলাকায় তার বাড়ির পাশে ইয়াবার চালান আদান প্রদান করছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ইমান আলীর সঙ্গে তার দুই সহযোগীও ছিল। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। পরে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় ইমান আলী গুলিবিদ্ধ হন। আর বাকি দুজন পালিয়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় ইমান আলীকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
রাজশাহীর পুঠিয়ায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লিয়াকত নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মাদক ব্যবসায়ী লিয়াকত শিকদার (৪৫) উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের নামাজগ্রামের জাক্কার মন্ডলের ছেলে ও স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা ছিলো। তিনি এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে।
র্যাব-৫ উপ-অধিনায়ক রমজর আশরাফুল ইসলাম জানান, রাতে ওই এলাকায় র্যাবের একটি টহল দল মাদক বিরোধী অভিযান চালায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাবের টহল দলের উপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় লিয়াকত মোটরসাইকেল নিয়ে পালাতে গেলে গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুলিবিদ্ধ লিয়াকতকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘাষণা করেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে র্যাব ৮২৩ পিস ইয়াবা, ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে।
এদিকে নিহত লিয়াকতের পরিবার জানিয়েছে, গত শনিবার দুপুর থেকে লিয়াকত নিখোঁজ ছিলেন। পরে রাতে তারা খবর পান লিয়াকত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী মো. আবুল কালাম আজাদ খান (৪২) নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে বারটার সময় ঘাটাইল উপজেলার দেওলাবাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, তিন রাউন্ড তাজা গুলি, একটি ম্যাগজিন, একশ বোতল ফেনসিডিল ও দেড় হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-১২ টাঙ্গাইলের কোম্পানী কমান্ডার মেজর রবিউল ইসলাম জানান, গতকাল রাত দুইটার দিকে গোয়েন্দা সূত্রে তাদের কাছে খবর আসে ঘাটাইল উপজেলার দেওলাবাড়ী এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের ইট ভাটায় ৫/৬ জন অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী অবস্থান করছে। এ খবরের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সদস্যরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুরলে র্যাবও পাল্টা জবাব দেয়। এক পর্যায় অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে এবং পালিয়ে যায়। পরে র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে একজন ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। আহত ব্যক্তিকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত ব্যক্তির নাম মো. আবুল কালাম আজাদ খান। নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছয়টি মাদক মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলেও র্যাব নিশ্চিত করে।
গাজীপুরের টঙ্গীতেও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হন পুলিশের দুই সহকারি উপপরিদর্শক। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। টঙ্গী মডেল থানার ওসি কামাল হোসেন মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে একজনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের সন্যাসীতলা মাঠের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জনাব আলী (৩২) নামে এক চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। এসময় পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি শটগান, দু’টি কার্তুজ, তিনটি রামদা এবং এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত জনাব আলীর বিরুদ্ধে জীবননগরসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত ১১টি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। জীবননগর থানা পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের বিষয়টি নিশ্চিয় করেছেন।