1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
অর্থের বিনিময়ে ‘হিন্দুত্ববাদী’ খবর প্রচার করতে রাজি হয়েছিল ২৫টি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম! - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো: সিপিডির রেহমান সোবহান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে যা বললেন নিপুণ তালিকা দিতে না পারলে ফখরুলকে ক্ষমা চাইতে বললেন ওবায়দুল কাদের প্রকাশিত হলো দিদারের ‘বৈশাখ এলো রে এলো বৈশাখ’ আ.লীগের মতো ককটেল পার্টিতে বিশ্বাসী নয় বিএনপি: রিজভী হৃদয় খানের সঙ্গে জুটি ন্যান্সিকন্যা রোদেলার শাকিব ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষকে ভাবতে পারি না: বুবলী শাকিবের এমন সময় আমাদেরও ছিল: ওমর সানী কত টাকা সালামি পেলেন জায়েদ খান, দিতে হলো কত লাখ? শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ে,দেনমোহর, বিচ্ছেদসহ নানা বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন বুবলী দেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি, বৃহস্পতিবার ঈদ বাড়তি ভাড়া চাওয়ায় ‘যাত্রীদের মা’র’ধরে’ বাসচালক ও হেলপার নি’হ’ত ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে সাকিব

অর্থের বিনিময়ে ‘হিন্দুত্ববাদী’ খবর প্রচার করতে রাজি হয়েছিল ২৫টি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম!

  • Update Time : বুধবার, ৩০ মে, ২০১৮
  • ৬১২ Time View

ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে কাঁপিয়ে দিয়েছে কোবরাপোস্ট নামের একটি ওয়েবসাইট। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, পুষ্প শর্মা নামের একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ভারতীয় বড় বড় সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। কোবরাপোস্টের চালানো স্টিং অপারেশনে দেখা গেছে, অর্থের বিনিময়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ‘হিন্দুত্ববাদী’ খবর প্রচার করতে রাজি হয়েছিল দেশটির প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যম। এই খবর ফাঁস হওয়ার পর তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশেরও আগ্রহ দেখায়নি এসব মিডিয়া। এ নিয়ে এখন টালমাটাল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে চলছে ভারতীয় মিডিয়া? আর বস্তুনিষ্ঠতা ও সত্য প্রকাশে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বই বা কোথায় গেল?

গত শুক্রবার ৪৯টি ভিডিওচিত্র প্রকাশ করে কোবরাপোস্ট দাবি করেছে, অর্থের বিনিময়ে বিজেপির ‘হিন্দুত্ববাদী’ খবর প্রচার করতে রাজি হয়েছিল দেশটির ২৫টি সংবাদমাধ্যম।ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ আগে প্রথম দফায় কিছু ভিডিওচিত্র প্রকাশ করে কোবরাপোস্ট। ১৭টি মিডিয়াগোষ্ঠীর ওপর ওই ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছিল। এরপর শুক্রবার ফের কিছু ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা হয়। মূলত, ভারতের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার ভিডিওচিত্র এগুলো। এতে দেখা গেছে, সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ কর্তারা অর্থের বিনিময়ে ‘হিন্দুত্ববাদী’ রাজনীতির খবর প্রচারে রাজি হয়ে যান। একই সঙ্গে বিজেপির পক্ষ নিয়ে কংগ্রেস, বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি), সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও জনতা দলের (ধর্মনিরপেক্ষ) নেতাদের সমালোচনা করে সংবাদ প্রকাশের বিষয়েও রাজি হয়েছিলেন এসব সংবাদমাধ্যমের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।

প্রকাশিত ভিডিওতে নেটওয়ার্কএইটিন, স্টার ইন্ডিয়া, জি নিউজ, টাইমস গ্রুপ (টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ একাধিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের মালিক), ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপ, দৈনিক জাগরণ, হিন্দুস্তান টাইমস, পেটিএমসহ বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ কর্তাদের দেখা গেছে। কিছু ক্ষেত্রে মিডিয়াগোষ্ঠীর মালিক বা সম্পাদকদেরও ভিডিওতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের ভাইস চেয়ারপারসন কাল্লি পুরি, টাইমস গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিনীত জৈন, পেটিএমের ভাইস প্রেসিডেন্ট অজয় শেখর শর্মা, ভারত সমাচারের প্রধান সম্পাদক ব্রিজেশ মিশ্র প্রমুখ। কোবরাপোস্ট মোট ২৭টি সংবাদমাধ্যমে স্টিং অপারেশন চালিয়েছিল। এর মধ্যে সাজানো প্রস্তাব পত্রপাঠ নাকচ করেছে দুটি বাংলা পত্রিকা। এগুলো হলো কলকাতার দৈনিক বর্তমান ও সংবাদ।

শুক্রবার ভিডিওগুলো প্রকাশের আগের দিনই দিল্লি হাইকোর্ট একটি ভিডিওর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। দৈনিক ভাস্করের পক্ষ থেকে করা নিষেধাজ্ঞার আবেদনে সাড়া দিয়ে গত বৃহস্পতিবার আদালত বলেছিলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট ভিডিও প্রকাশ করা যাবে না। আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোবরাপোস্ট তাদের পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করে এবং বাকি সব ভিডিওচিত্র অনলাইনে প্রকাশ করে দেয়। এই ডকুমেন্টারির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ১৩৬: পার্ট ২’। এর শুরুতেই বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক ২০১৭ সালের সূচকে ভারতের অবস্থান দেখানো হয়।

পুষ্প শর্মাই মূলত স্টিং অপারেশনে অংশ নিয়েছেন। ছদ্মবেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে গিয়ে শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছে অর্থের বিনিময়ে হিন্দুত্ববাদী খবর প্রচারের প্রস্তাব দেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে দেওয়া প্রস্তাবে হিন্দুত্ববাদী খবর প্রচারের জন্য দেড় কোটি রুপি থেকে দরদাম শুরু করেন পুষ্প। অন্যদিকে, স্টার ইন্ডিয়া ও টাইমস অব ইন্ডিয়া গ্রুপের মতো জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে ৫০০ কোটি রুপি পর্যন্ত দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। তবে এসব ভিডিওচিত্রে নগদ বা চেকে অর্থ লেনদেন বা চুক্তি স্বাক্ষরের কোনো বিষয় চোখে পড়েনি।

স্টিং অপারেশন কী?
সত্য উদ্‌ঘাটনের জন্য সাংবাদিকেরা ছদ্মবেশে যে অভিযান চালান, তাকেই বলা হয় স্টিং অপারেশন। এ ক্ষেত্রে অংশ নেওয়া সাংবাদিক নিজের পরিচয় গোপন করে একটি ফাঁদ পাতেন এবং তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে প্রকৃত সত্য বের করে আনার চেষ্টা করেন। তবে এসব স্টিং অপারেশনের নৈতিক ভিত্তি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই এ ধরনের অভিযানকে নৈতিকতাবিরোধী বলে অভিহিত করে থাকেন। অন্যদিকে, স্টিং অপারেশনের পক্ষের ব্যক্তিদের বক্তব্য, প্রকৃত সত্য বের করতেই এ ধরনের অভিযান প্রয়োজন।

ভিডিওচিত্রে কে কী বলেছেন
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শ্রীমদ্‌ভগবতগীতা প্রচার সমিতি’র আচার্য সেজে সংবাদমাধ্যমগুলোর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন পুষ্প শর্মা। অর্থের বিনিময়ে মোট তিনটি পর্বে প্রচার চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম পর্বে বলা হয়, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম অবতার কৃষ্ণর বিভিন্ন উক্তি এবং হিন্দুত্ববাদী বক্তব্য প্রচারের শীর্ষে রাখতে হবে। দ্বিতীয় পর্বে বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রচারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পুষ্প। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধীদের ‘পাপ্পু’, ‘বুয়া’, ‘বাবুয়া’ প্রভৃতি নামে অভিহিত করে অপমান করার কথা বলেন আচার্যরূপী পুষ্প। এর বিপরীতে ‘হিন্দু নেতাদের’ পক্ষে ইতিবাচক সংবাদ প্রচারের প্রস্তাব দেন তিনি। তৃতীয় পর্বে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে বিদ্বেষমূলক প্রচার চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। পুষ্প বলেছিলেন, নির্বাচনের মাঠকে ‘বিভক্ত’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ রূপ দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রচার করতে হবে।

প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের কাল্লি পুরি বলছেন, ‘…যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আমরা কোনো বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দিই না। আমাদের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেকোনো বিজ্ঞাপন এখানে চালানো যেতে পারে।’ তবে ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের সম্পাদকীয় নীতিমালায় কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তবে কথিত ওই বিজ্ঞাপন ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের কার্যালয়ে তৈরির বিষয়ে রাজি হয়েছিলেন কাল্লি পুরি।

কোবরাপোস্টের ভিডিও অনলাইনে প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে ইন্ডিয়া টুডে বলেছে, যেসব কথাবার্তা হয়েছিল, তা এই ভিডিওচিত্রে প্রকৃতভাবে দেখানো হয়নি এবং সত্যকে বিকৃত করা হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রকাশিত ভিডিওতে টাইমস অব ইন্ডিয়া গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিনীত জৈনকেনগদে ৫০০ কোটি রুপি দেওয়ার প্রস্তাব করেন পুষ্প শর্মা। তাঁদের মধ্যে অর্থ লেনদেনের পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হতে দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, বিনীত জৈন ও তাঁর একজন সহযোগী অর্থ চেকে দেওয়ার অনুরোধ করছেন। তবে বিনীত বলেন, তারা এই কাজ করতে রাজি, তবে নিজেদের নিরপেক্ষ রূপ ধরে রাখতে হবে। ভিডিওতে বিনীতকে বলতে দেখা গেছে, ‘করপোরেট হিসেবে আমাদের নিজেদের নিরপেক্ষ প্রতীয়মান করতে হবে। যতটুকু নিরপেক্ষ থাকা যায় আরকি…।’

তবে ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিনীত জৈন। সানডে এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে ই-মেইল করা হলেও তিনি তার কোনো উত্তর দেননি।

কোবরাপোস্টের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, পুষ্প শর্মার প্রস্তাবে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা অনিল দুয়া বলছেন, ‘প্রথম দুটি ধাপ সম্ভব। দেখুন, আপনি যেভাবে চাইছেন, সেভাবে কাজ করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’ এরপরই সংবাদমাধ্যমের সিইওর সঙ্গে কথা বলার শর্ত দেন অনিল। তিনি বলেন, সিইওর সঙ্গে কথা বলা ছাড়া কিছু করা যাবে না।

কোবরাপোস্টের ভিডিও প্রকাশের পর অনিল দুয়া দ্য সানডে এক্সপ্রেসের কাছে দাবি করেন যে তাঁর বক্তব্য পুরোপুরি প্রচারিত হয়নি এবং সম্পাদনা করা হয়েছে।

অন্যদিকে, পেটিএমের কাছেও আচার্য হয়ে গিয়েছিলেন পুষ্প শর্মা। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষ কর্মকর্তা অজয় শেখর শর্মা বলছেন, এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) হয়ে অনেক কাজ করেছেন তারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অফিসের কাছে গ্রাহকদের তথ্য দেওয়ার কথাও স্বীকার করেন অজয়। ভিডিও প্রকাশের পর এক টুইট বার্তায় অবশ্য পেটিএম দাবি করেছে, ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। গ্রাহকদের সব তথ্য নিরাপদেই আছে।

নিখাদ ‘ফাঁদ’
কোবরাপোস্টের অনিরুদ্ধ বহাল দ্য সানডে এক্সপ্রেসকে বলেছেন, পুষ্প শর্মা নিজেই এই অনুসন্ধান চালিয়েছেন। কোবরাপোস্ট শুধু পুষ্পর কাছ থেকে প্রতিবেদনগুলো কিনেছে। অনিরুদ্ধ বলেন, ‘প্রতিবেদক একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁরা এটিকে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন…তাঁদের কেউ (মিডিয়া নির্বাহী) একবারও চিন্তা করেননি যে আমাদের কাছে অর্থ না-ও থাকতে পারে।’

অনিরুদ্ধ জানান, কোনো অর্থই ছিল না প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কীভাবে অর্থ দেব? আমাদের কোনো অর্থই নেই।’ অর্থাৎ পুষ্প শর্মা শুধু অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। আর তাতেই ধরা ভারতীয় মিডিয়ার শীর্ষ ব্যক্তিরা।

কে এই পুষ্প শর্মা?
টাইম মিডিয়া গ্রুপের মালিকানাধীন অন্যতম সংবাদমাধ্যম হলো টাইমস অব ইন্ডিয়া। কোবরাপোস্টের ভিডিওগুলো প্রকাশের পর এই সংবাদমাধ্যম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে দিল্লি পুলিশ পুষ্প শর্মাকে গ্রেপ্তার করেছিল।

ভারত সরকারের আয়ুশ মন্ত্রণালয়ে যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মুসলিমদের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য করা হচ্ছে—এমন একটি প্রতিবেদন ২০১৬ সালে প্রকাশ করেছিলেন পুষ্প। তাতে বলা হয়েছিল, যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক পদে মুসলিমদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। তবে সরকার পক্ষের অভিযোগ ছিল, তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া একটি সরকারি জবাব নকল করেছিলেন পুষ্প। তবে পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারণ, পুষ্পর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

টাইমস অব ইন্ডিয়া আরও দাবি করেছে, ২০০৯ সালেও নাকি গ্রেপ্তার করা হয়েছিল পুষ্প শর্মাকে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্ঘটনা সাজিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে স্টিং অপারেশন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল।

স্টিং অপারেশনের লক্ষ্য যাঁরা
কোবরাপোস্টের ভিডিওচিত্রে জি নিউজ, স্টার ইন্ডিয়া, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপ, নেটওয়ার্ক ১৮, এবিপি গ্রুপ, পেটিএম, রেডিও ওয়ান, সুবর্ণা নিউজ, ইন্ডিগো ৯১.৯ এফএম, দৈনিক জাগরণ, ভারত সমাচার, স্বরাজ এক্সপ্রেস নিউজ, সান গ্রুপ, লোকমাত, এবিএন অন্ধ্রজ্যোতি, টিভিফাইভ নিউজ, দিনামালার, বিগ এফএম, কে নিউজ, ইন্ডিয়া ভয়েস, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এমটিভি নিউজ, ওপেন মিডিয়া নেটওয়ার্ক, বর্তমান ও দৈনিক সংবাদের কর্মকর্তাদের দেখা গেছে।

কেন চুপ প্রধান প্রধান ভারতীয় সংবাদমাধ্যম?
ভারতে স্টিং অপারেশন এই প্রথম নয়। তবে দেশটির প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যম এই প্রথম স্টিং অপারেশনের বৈধতা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই আচরণকে একটি বাংলা প্রবাদের সঙ্গে তুলনা করা যায়—ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে! কারণ, যেসব সংবাদমাধ্যম আজ স্টিং অপারেশনের বিরুদ্ধে বলছে, তারাই কিছুদিন আগেও এ কাজের সমর্থনে সংবাদ প্রকাশ করেছে। স্টিং অপারেশনের ভিডিও সরাসরি নিজেদের টিভি চ্যানেলে প্রচার করেছে।

ভারতে স্টিং অপারেশন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় ২০০১ সালে, তেহেলকা ম্যাগাজিনের সৌজন্যে। ওই স্টিং অপারেশনে দেখা গিয়েছিল, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাঘা বাঘা কর্মকর্তাই ঘুষের বিনিময়ে সরকারিভাবে অস্ত্র কেনার বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি। এই বিষয় ব্যাপকভাবে প্রচার করে জি নিউজ। ২০০২ সালে গুজরাটে হওয়া কিছু দাঙ্গা নিয়ে পরে আবার স্টিং অপারেশন চালিয়েছিল তেহেলকা। ওই অভিযানে পাওয়া তথ্য আবার আদালতে প্রমাণ হিসেবেও দাখিল করা হয়েছিল। কাস্টিং কাউচ নিয়ে স্টিং অপারেশন চালিয়ে শক্তি কাপুরকে ফাঁদে ফেলেছিল ইন্ডিয়া টিভি চ্যানেল।

২০০৬ সালে জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্টার টিভি স্টিং অপারেশন চালিয়েছিল। তাতে অপরাধী ধরাও পড়েছিল। সিএনএন-আইবিএন চালিয়েছে বেশ কটি স্টিং অপারেশন। ১৯৯৯ সালে এনডিটিভির চালানো এক স্টিং অপারেশনে সঞ্জীব নন্দর কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যায়। তিনি ভারতের সাবেক নৌবাহিনীপ্রধানের ছেলে। মাতাল হয়ে গাড়ি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করেছিলেন সঞ্জীব। পরে তাঁর আইনজীবী সাক্ষ্য পরিবর্তনের বেআইনি চেষ্টা করেছিলেন। সেটিই ধরা পড়েছিলেন এনডিটিভির স্টিং অপারেশনে।

অথচ এবার বড় বড় সংবাদমাধ্যমই চুপ! সাম্প্রতিক এই ঘটনায় অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রতাপ ভানু মেহতা একটি কলাম লিখেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত সেই কলামে তিনি লিখেছেন, ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনাস্থা অনেক দিন ধরেই আছে। বর্তমানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দেশের গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হওয়ার বদলে এর জন্য মৌলিক হুমকি হয়ে উঠেছে।

‘দ্য ওয়্যার’ নামের অনলাইন সংবাদমাধ্যমের কর্ণধার সিদ্ধার্থ বরদারাজন বলেন, এই স্টিং অপারেশনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে ভারতের বড় মিডিয়াগুলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করছে। যে এজেন্ডা দেশকে বিভক্ত করে দেয়, নির্বাচনের আগে বিভক্তির রাজনীতিকে সমর্থন করে, সেটিও বাস্তবায়ন করতে তারা দ্বিধা করে না। সিদ্ধার্থ আগে ভারতের বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুর সম্পাদক ছিলেন।

কোবরাপোস্টের স্টিং অপারেশনে ভারতীয় মিডিয়ার পচে যাওয়া চেহারা প্রকাশিত হয়েছে মন্তব্য করে প্রতাপ ভানু মেহতা বলেন, স্টিং অপারেশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক নয়। তবে তাই বলে এই অভিযানের কারণে প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোর যে ‘দুর্গন্ধ’ প্রকাশ্যে এসেছে, তা-ও অগ্রাহ্য করা যায় না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিয়ে সাম্প্রতিক এই বিতর্কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন রাজনীতিকেরা। জনগণের মধ্যে সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যত প্রশ্ন জাগবে, রাজনীতিকদের লাভ হবে তত বেশি। বিতর্কের মাঠে বিভক্তির খেলা খেলবেন দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিকেরা। আর তাতে ভারতীয় জনগণ ও দেশটির গণতন্ত্রই পড়বে সবচেয়ে বড় বিপদে। আরও সুগম হবে কর্তৃত্ববাদের পথ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com