ইতিকাক শাব্দিক অর্থ-অবস্থান করা, আটকে রাখা। পরিভায়ায় ইতিকাফের নিয়তে পুরুষেরা এমন মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়; এবং কোনো মহিলার নিজগৃহে নামাজের স্থানে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে-দুনিয়ার সবরকম ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে একমাত্র তার ইবাদতে লেগে থাকা।
১। মহিলাগণ নিজগৃহে পূর্ব থেকে নামাজের স্থান নির্ধারিত না থাকলে, ইতিকাফে বসার সময় একটি স্থান নির্ধারণ করে নেবেন। তবে, মহিলাদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরুহ। (শামি : ২)
ইতিকাফের প্রকারভেদ:
তিন প্রকার ইতিকাফের মধ্যে ‘প্রথম প্রকার’ তথা মান্নতের ইতিকাফ ওয়াজিব এবং তা শুদ্ধ হওয়ার জন্য রোজা শর্ত। যে কারণে মান্নতের ইতিকাফ কমপক্ষে একদিন হতে হবে।
‘দ্বিতীয় প্রকার’ ইতিকাফ ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া’। যা রমজানের শেষের দশকে করতে হয় এবং এতেও রোজা হয়ে থাকে। ‘তৃতীয় প্রকার’ ইতিকাফ হচ্ছে নফল, যা অল্প সময়ের জন্যও হতে পারে এবং তাতে রোজা ইত্যাদি জরুরি নয়। যেকোনো পরিমাণ সময়ের জন্য নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করলেই নফল ইতিকাফের সওয়াব পেয়ে যাবে। (তাহতাবি)
ইতিকাফের ফজিলত ও উপকারিতা অপরিসীম। কেননা দুনিয়ার সবরকম ঝামেলা হতে নিজেকে মুক্ত করে নিভৃতে, একাগ্রচিত্তে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্য ইতিকাফ করা হয়। ইতিকাফরত অবস্থায় বহির্জগতের সব রকমের পাপ থেকে বেঁচে থাকা যায়। ইতিকাফকালীন বান্দা যেন আল্লাহর গৃহে তার সামনে, সার্বক্ষণিক উপস্থিত। যে কারণে সে আল্লাহর কাছে প্রিয় ও সম্মানী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, এবং মহান আল্লাহ তার প্রতি দয়া-অনুগ্রহ, ক্ষমা ও রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। ইতিকাফকারীর পুরো অবস্থানের সময়, পানাহার, ঘুমানো, বৈধ প্রয়োজন (পেশাব-পায়খানা) সবই ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয়। (বাদায়ে : ২)
হজরত সাঈদ ইবন জুবাইর (রা:), হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা:) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা:) ইতিকাফকারী সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, যে ইতিকাফ ও মসজিদে আবদ্ধ থাকার কারণে সব পাপ থেকে বেঁচে থাকে এবং তার নেকির হিসাবের মধ্যে সর্বপ্রকার নেকি সম্পাদনকারীর ন্যায় নেকী অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।’ (ইবন মাজা)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, একজন ইতিকাফকারী মসজিদে আবদ্ধ হয়ে যেমন অনেক ইবাদতের সুযোগ পায়, তেমনি বহির্জগতের সম্ভাব্য অনেক নেকি থেকে কার্যত বঞ্চিতও হয়। যেমন, রোগীর সেবা, এতিম, বিধবা, নিঃস্বদের সহযোগিতা, মৃতের গোসল, জানাজা, সমাজসেবা ইত্যাদিতে শরিক হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। যে কারণে উক্ত হাদিসটিতে বলা হয়েছে, সে ওইসব কাজেরও সওয়াব পেয়ে যাবে; যদি তার তেমন নিয়ত থাকে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সা: প্রত্যেক রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন; কিন্তু যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেছেন, সে বছর ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন। (সহিহ বুখারি)। ইতিকাফ সর্বশ্রেষ্ঠ আমল, তা যদি একনিষ্ঠতার সঙ্গে হয়ে থাকে। (বাহরুর রায়িক : ২)
‘শবে কদর’ প্রাপ্তির প্রসঙ্গ ও উদ্দেশ্য ছাড়াও মাহে রজমানের শেষ মুহূর্তে ইবাদত-বন্দেগির পরিমাণ বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগানোর স্বার্থেও ইতিকাফ করা হয়ে থাকে। তাই যথাসাধ্য সবার ইতিকাফের সুযোগ গ্রহণ করা সমীচীন।
এই ইতিকাফের ফজিলত ও গুরুত্ব উপলব্ধির জন্য এ টুকুই যথেষ্ট, যে মহান আল্লাহ নিজেই পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় ও সূরা হজ্জে ইতিকাফের কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে যে-
‘এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো, (০২ : ১২৫)।
একই ইতিকাফ বা মসজিদে অবস্থান করার প্রসঙ্গ সূরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে এবং সূরা হজ্জের ২৫-২৬ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সুতরাং বিধি মোতাবেক ইতিকাফ করা তথা মসজিদে অবস্থান করাও যে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম উপায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইসলামি ফাউন্ডেশন ।