মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি মার্কিন কোম্পানিগুলোর উপরই উল্টো আঘাত হানতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালু হওয়া পাল্টা শুল্ক নীতির কারণে মার্কিন মোটরসাইকেল নির্মাতা কোম্পানি হার্লে ডেভিডসন তাদের ইউরোপীয় গ্রাহকদের জন্য মোটরসাইকেল নির্মাণের কাজ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর সিএনএন ।
কোম্পানিটি জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কের কারণে বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলার মুনাফা খোয়াবে কোম্পানিটি। হার্লে ডেভিডসনের এই সিদ্ধান্তটি থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ এর মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধে মার্কিন কোম্পানিগুলোও সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সোমবার এক রেগুলেটরি ফাইলিংয়ে কোম্পানিটি জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কের বোঝা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক উৎপাদন বাড়ানো আমাদের অগ্রাধিকার ছিল না, কিন্তু একমাত্র টেকসই সিদ্ধান্ত হিসেবে এটা করা হচ্ছে। গতকাল এ সিদ্ধান্তের পর হার্লে ডেভিডসনের শেয়ার দর পড়েছে ৬ শতাংশ।
এ সিদ্ধান্তের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে নিজের বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, সব কোম্পানির মধ্যে হার্লে ডেভিডসনই প্রথম যে আত্মসমর্পণ করলো।ধৈর্য ধরুন শুল্ক আসলে হার্লের একটি অজুহাত মাত্র।
চলতি মাসের শুরুর দিকে কানাডা, মেক্সিকো এবং ইইউ থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি করা ৩২০ কোটি ডলার সমমানের পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল, কমলার জ্যুস, বারবন, পিনাট বাটার, মোটরবোট, সিগারেট এবং ডেনিম।
মোটরসাইকেলের জন্য ইউরোপের রপ্তানি শুল্ক ছিল ৬ শতাংশ, নতুন শুল্কারোপের সিদ্ধান্তে শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ শতাংশ। হার্লে ডেভিডসন জানায়, নতুন আরোপ করা শুল্কের ফলে প্রতি বাইক রপ্তানি করতে ২২০০ ডলার বেশি খরচ হবে।
কোম্পানিটি পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতাদের জন্য দাম বাড়াতে চায় না বলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক বার্তায় কোম্পানিটি জানায়, অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়িয়ে দিলে ইউরোপে তাৎক্ষনিকভাবে আমাদের ব্যবসা ক্ষতির মুখ দেখবে।
তবে কোম্পানিটি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি এর ফলে কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হবে কিনা। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের মিল্কওয়াকি ভিত্তিক এ মোটরসাইকেল নির্মাতা কোম্পানিটিতে কর্মরত আছে ছয় হাজার কর্মচারী।
হার্লে ডেভিডসনের মুখপাত্র মাইকেল ফ্লুগুয়েফট জানায়, কোম্পানিটি নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে চাকরিতে কোন প্রভাব পড়বে কিনা সে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখছে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, হার্লে ডেভিডসন তাদের অধিকাংশ মোটরসাইকেল যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া এবং মিসৌরিতে বানিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউরোপ কোম্পানিটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। গেলো বছরে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ ৪৮ হাজার হার্লে বাইক বিক্রি হয়েছিল আর ইউরোপে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজার বাইক।
তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানিটির বাইকের ক্রেতা কমে যাওয়ায় কোম্পানিটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে কানসাস সিটির একটি ফ্যাক্টরি বন্ধ দেয়ার ঘোষণা দেয়। ঘোষণাটি এখনো কার্যকর হয়নি। তবে অগাস্ট মাসে ফ্যাক্টরিটি থেকে জনবল ছাঁটাই শুরু হওয়ার কথা।
সাম্প্রতিক বছরে হার্লে ডেভিডসন ইন্ডিয়া এবং ব্রাজিলে নিজেদের ফ্যাক্টরি খুলেছে এবং চলতি বছরেই থাইল্যান্ডে আরেকটি ফ্যাক্টরি খোলার কথা রয়েছে।