গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কশিমনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
৩ জুলাই, মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কি না, তা জানেন না এই কমিশনার। কিন্তু সিইসি তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।
কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে, সেটার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে মাহবুব বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কিছু তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছি। আমার মনে হয়, আগামী দিন দশেকের মধ্যে একটা চিত্র পেয়ে যাব।’
কমিশনার জানান, গাজীপুর নির্বাচনে কিছু জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিবেদন দেননি। আবার অনেক পর্যবেক্ষকও প্রতিবেদন দেননি। কেন তারা প্রতিবেদন দিলেন না, সেই বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে কি না, কিছু কেন্দ্রে কেন কম-বেশি ভোট পড়েছে কি না, গণমাধ্যমে যেসব অনিয়মের খবর বেরিয়েছে এবং এর বাইরেও কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির করার পর তা নির্বাচন কমিশনের সভায় উত্থাপন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে কি না, তা মাহবুব তালুকদার ছাড়াও অন্য তিন কমিশনার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভায় সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ বিষয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কমিশনারদের মধ্যে আমি পাঁচজনের একজন। আমার ক্ষমতা সীমিত। আমি যা কিছুই করি না কেন, এগুলো কমিশন সভায় উত্থাপিত হবে। কমিশনার সভার নির্দেশ অনুযায়ী এটা বাস্তবায়িত হবে বা আলোর মুখ দেখবে অথবা দেখবে না।’
দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে গাজীপুরের নির্বাচন সম্প্রচার করা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের নির্বাচনে যেসব অনিয়ম গণমাধ্যমে বেরিয়েছে, এর সত্যতা নির্ণয় করতে চাই। তারা মিডিয়াতে অনেক কথা বলেছেন। আরও অনেক কথা আছে, যেগুলো তারা মিডিয়াতে বলতে পারেননি। সাহসিকতার সঙ্গে সেসব কথা সাংবাদিকরা আমার সঙ্গে বিনিময় করেছেন। মিডিয়াতে যেসব তথ্য এসেছে, আমি সেগুলোর তৃণমূলে গিয়ে দেখতে চাই, আসলে সেখানে কী ঘটেছিল।’
গাজীপুরের কিছু কেন্দ্রে কেন ২০ ভাগের কম ভোট পড়ল, কিছু কেন্দ্রে কেন ৮০ ভাগের বেশি ভোট পড়ল, এসব বিষয়গুলোকে প্রতিবেদনের কেন্দ্রে আনা হবে বলেও জানান এই কমিশনার।
খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা অনিয়মের কথা স্বীকার করেননি। তাহলে এখন তারা কী বিষয়টি স্বীকার করবেন জানতে চাইলে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি কারো ওপরই নির্ভরশীল থাকতে চাই না। তারা প্রতিবেদন দিলেন না বা কেন দিলেন না, এই প্রশ্নের সম্মুখীন তাদের হতে হবে।
আমি একটু আগে খবর নিয়েছি, যে জুডিশিয়াল ছিল, তারা কোনো প্রতিবেদন দেননি। তাহলে এই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সেখানে পাঠানোর প্রয়োজনীটা কী ছিল? যে পর্যবেক্ষকরা ওখানে গিয়েছিলেন, তাদের কয়জন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দিয়েছিলেন, সেটা আমি যাচাই-বাছাই করে দেখতে চাই। এসব যাচাই-বাছাই করে আমি সত্য নিরূপণ করতে চাই, আসলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন কী হয়েছিল, কেমন হয়েছিল।’
নির্বাচনকে সহযোগিতা করার জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেছে কি না, জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘আমি এখনই কী করে বলব, তারা সহযোগিতা করেছে কি না। আমি তো এটাই পর্যবেক্ষণ করতে চাচ্ছি যে, তারা কী করেছিল। কতটুকু সহযোগিতা করেছে। পর্যবেক্ষণের আগে আমি কী করে বলব যে, সহায়তা পেয়েছি বা পাইনি।’
‘খুলনা ও গাজীপুরে অনিয়ম হয়েছে’
গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে বলেও জানান মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘সেখানে নিশ্চয়ই কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে, যে জন্য কিছু কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। আমি এ কথা কখনোই বলব না, সেখানে কোনো ভুলভ্রান্তি হয়নি। সে কেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ার কারণগুলো আমাদের মোটামুটি জানা। তার অতিরিক্ত আর কী আছে, সেটাকেও আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।’
১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এক লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পান এক লাখ আট হাজার ৯৫৬ ভোট। ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে অনিয়মের কারণে তিনটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়।
২৬ জুন অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম চার লাখ ১০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পান এক লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। এর ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ অনিয়মের কারণে স্থগিত করা হয়।
‘খুলনা-গাজীপুরের মতো আগামী তিন নির্বাচন হবে না’
আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই তিন সিটির নির্বাচন গাজীপুর ও খুলনার মতো হবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
এই কমিশনারের ভাষ্য, ‘খুলনা বা গাজীপুরে যে ধরনের নির্বাচন হয়েছে, সেখানকার নির্বাচনের যেসব ভুলভ্রান্তি ছিল, সেগুলোকে আমরা চিহ্নিত করেছি। আগামীতে যে তিন সিটি নির্বাচন রয়েছে, সেগুলোতে যাতে সেই ভুলভ্রান্তির পুনরাবৃত্তি না ঘটে, যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোর যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়টি আমরা আবশ্যই আমাদের দৃষ্টিতে রাখব।
গত দুটি সিটি নির্বাচনের সঙ্গে আগামী তিনটি নির্বাচনের তুলনা হবে না। সবার গ্রহণযোগ্য হবে এমন নির্বাচনই করা হবে।’
খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কী অনিয়ম হয়েছিল, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহাবুব তালুকদার বলেন, ‘এটা এই মুহূর্তে আপনাদেরকে বলা যাবে না।’
আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন আলাদা আলাদা করার প্রস্তাব এখনো আসেনি। একদিনেই জাতীয় নির্বাচন করা হবে বলেও মনে করেন এই কমিশনার।