ধর্ষণ মামলার আসামিকে রক্ষার চেষ্টার অভিযোগে বগুড়ায় এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যকে আদালতে তলবের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. আবদুর রহিম এ আদেশ দেন।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউপির চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ এবং ইউপি সদস্য মোস্তফা কামালকে আদালতে তলব করে হাজির হওয়ার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
বাদীকে চাপ দিয়ে ‘আপস-মীমাংসার’ কাগজ তৈরির মাধ্যমে ধর্ষণ মামলার আসামিকে রক্ষার অভিযোগ আনা হয় ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্যের বিরুদ্ধে।
একই আদেশে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ও আইএফআইসি ব্যাংক বগুড়া শাখায় কর্মরত শামসুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। শামসুর রহমান বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার সদরের গোচন গ্রামের বাসিন্দা।
বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আশেকুর রহমান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের একজন নারী গত বছরের ৩ অক্টোবর বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা শামসুর রহমানের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। ধর্ষণের ফলে ওই নারী একটি সন্তানের জন্ম দেন। আদালত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
বাদীর অভিযোগ, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন নিজের পক্ষে নিতে আসামি শামসুর রহমান রায়নগর ইউপির চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ও ইউপি সদস্য মোস্তফা কামালকে হাত করেন। ইউপি চেয়ারম্যান ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য যোগসাজশ করে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য বাদীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
একপর্যায়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বাদীর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে আপসনামা তৈরি করেন। আপসনামায় চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ এবং ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল স্বাক্ষর করেন। পরে ওই আপসনামার ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল মানিক গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বাদীর অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রতিবেদন দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে গত ১১ ফেব্রুয়ারি নির্যাতিত ওই নারী আদালতে নারাজি দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর ওপর চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক আপসনামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আশেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,
আজ ওই ধর্ষণ মামলার বাদীর নারাজির আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। ধর্ষণ মামলা আপসনামায় স্বাক্ষর করার কারণে বিচারক আবদুর রহিম ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যকে আদালতে তলব করেন।
চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ও সদস্য মোস্তফা কামাল হাজির হলে আদালত তাঁদের ধর্ষণ মামলার আসামিকে রক্ষাচেষ্টার অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলার মূল আসামি শামসুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। পরে আদালত পুলিশ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।