প্রতিটি ফুটবলারই স্বপ্ন দেখেন বিশ্বকাপে খেলার। সোনালি ট্রফিটাকে উঁচিয়ে ধরার। কিন্তু স্বপ্নের এই ট্রফিতে চুমো আঁকতে পারেন কজন?
বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের দুই মহাতারকা লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পারেননি। কিংবদন্তি হয়ে ফুটবল ইতিহাসের সোনালি পাতায় জায়গা করে নেওয়া মালদিনি-জিকো-প্লাতিনিরাও ব্যর্থ হয়েছেন স্বপ্নের এই বিশ্বকাপের ছোঁয়া পেতে। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে গোটা ফুটবল দুনিয়ার ভক্ত-অনুরাগীদের মন জয় করেও বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটাকে উঁচিয়ে ধরার ভাগ্য হয়নি তাদের।
অথচ সৌভাগ্য আল ফোন্সো আরিওলার। রাশিয়া বিশ্বকাপে ১ মিনিটও খেলার সুযোগ পাননি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর এই ফরাসি গোলরক্ষক। তারপরও স্বপ্নের বিশ্বকাপের ট্রফিটাকে উঁচিয়ে ধরেছেন তিনি। ফ্রান্সের ২৩ সদস্যের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হয়ে সোনার পদক পড়েই বাড়ি ফিরেছেন আল ফোন্সো আরিওলা।
ফ্রান্সের গোলরক্ষক হিসেবে আল ফোন্সো আরিওলা ছিলেন দিদিয়ের দেশমের তৃতীয় পছন্দ। এই তালিকায় প্রথম ছিলেন দলপতি হুগো লরিস। তারপর স্টিভ মান্দানা দুই নম্বর। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের গোলপোস্টকে সুরক্ষিত করতে এককভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন অধিনায়ক হুগো লরিস। তার অনুপস্থিতিতে স্টিভ মান্দানার ওপরেই আস্থা রেখেছেন দেশম।
এর ফলে ২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ২৩ সদস্যের স্কোয়াডে থাকলেও এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাননি আল ফোন্সো। শুধু রাশিয়া বিশ্বকাপ কেন? আল ফোন্সো এখন পর্যন্ত ফ্রান্সের হয়ে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচেই প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাননি। একেই তো বলে রাজকপাল।
তবে ফুটবল ইতিহাস এমন ঘটনার সাক্ষী আরও আগেই হয়েছে। তবে সেটা জানতে আপনাকে যেতে হবে আরও সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পেছনে। ১৯৮২ বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না খেলেও বিশ্বকাপ ট্রফির ছোঁয়া পেয়েছিলেন ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ফ্রাঙ্কো বারেসি। এসি মিলানের এই তারকা ফুটবলার ছয়বার ইতালিয়ান সিরি’এ লিগ এবং তিনবার ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের আগেই। অথচ স্পেনে যখন ইতালি চ্যাম্পিয়ন হয় ততদিন পর্যন্ত জাতীয় দলের জার্সিতে এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাননি ফ্রাঙ্কো বারেসি।
সতীর্থদের সঙ্গে বিশ্বকাপের ট্রফি উদযাপনে ব্যস্ত আরিওলা।
তবে পরবর্তীতে ১২ বছরের ক্যারিয়ারে ইতালির হয়ে ৮১ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বারেসি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে না হারলে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়েরও স্বাদ পেয়ে যেতেন এই ইতালিয়ান আইকন।
সেবার বারেসিই কিন্তু ইতালির প্রথম ফুটবলার নন যিনি টুর্নামেন্টের কোনো ম্যাচ না খেলেই বিশ্বকাপ জয়ের দেখা পান। আরিওলার মতো সেই বিশ্বকাপে জিওভান্নি গালিও ছিলেন ইতালির তৃতীয় পছন্দের গোলরক্ষক। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ইতালি চ্যাম্পিয়ন হলে এক মিনিট না খেললেও জিওভান্নি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হিসেবে সোনার পদক পড়েন।
তবে ২০১৪ সালে কোনো ম্যাচ না খেলেও বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হিসেবে সোনার পদক পড়েছিলেন জার্মানির এরিক ডার্ম। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই জার্মান খেলোয়াড় ব্রাজিল বিশ্বকাপে এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাননি। কিন্তু এর আগে জার্মানির জাতীয় দলের হয়ে এক ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।
২০১০ বিশ্বকাপের দিকে তাকান। সেবার বার্সেলোনার এক নম্বর গোলরক্ষক ছিলেন ভিক্টর ভালদেস। অথচ চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্পেনের ফেবারিট গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াসের জন্য এক মিনিটও ভালদেসকে দলে ডাকেননি ভিসেন্তে দেল বস্ক। তবে তার আগে ভালদেসও স্পেনের হয়ে এক ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।