সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে, উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে জিপিএ-৫-এর সংখ্যাও। চলতি বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় বসেছিল ১৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে প্রায় আড়াই শতাংশ। জিপিএ-৫-এর সংখ্যা কমেছে প্রায় ৯ হাজার। গত তিন বছর ধরে পাসের হার কমার পাশাপাশি কমছে জিপিএ-৫। কমছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে পাসের হার এমনভাবে হ্রাসের চারটি কারণের কথা বলেছে। কারণগুলো হলো-
ঘন ঘন পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন
জিপিএ-৫ হাতছাড়া হওয়া সিলেটের শমসের নগরের সুলতানা (ছদ্মনাম) জানান, এবার পরীক্ষার হলে কোথায় যেন একটা ভয়ভীতির পরিবেশ ছিল। আর বারবার পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তনে তিনিও বেশ খানিকটা উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। আর যে সাবজেক্টের কারণে এ-প্লাস মিস হয়েছে ওই সাবজেক্টের কোয়েশ্চান প্যাটার্নটা ভিন্ন ছিল।
ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একেক বছর এক এক রকম প্যাটার্ন নিয়ে আসে। এ বছর আমাদের শুরুতে বলা হলো সারা বাংলাদেশ একই কোয়েশ্চেনে সবাইকে পরীক্ষা দিতে হবে। টিচাররাও আমাদের নার্ভাস করে দিয়েছিল। এসব কিন্তু রেজাল্টে এফেক্ট করে।’
এবার ১০ শিক্ষাবোর্ডে গড় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তার মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭২ শতাংশ আর ছাত্রদের ৬৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
মূল বই না সহযোগী বই?
বরিশালের রাজাপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. কামরুন্নেসা আজাদ বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা মূল বই পড়ে না। যার কারণে বিষয় সম্পর্কে সে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল হতে পারে না। মূল বই যে ছেলেমেয়ে পড়বে, সে কখনো খারাপ করতে পারে না। সে এমসিকিউ বলেন আর সৃজনশীল বলেন। অবশ্যই আমি সহযোগী বইয়ের সাহায্য নেব, কিন্তু মূল বইটা টার্গেট থাকতে হবে, শিক্ষকের বেলায়ও তাই।’
কম লেখার অভ্যাস
মোবাইল ফোন-ডিজিটাল যুগের সঙ্গে হাতে লেখার পদ্ধতি দিয়ে পরীক্ষা- এই দুটিতে সামঞ্জস্যের ঘাটতি দেখছেন অধ্যাপক ড. কামরুন্নেসা আজাদ।
এই শিক্ষক বলেন, ‘আধুনিক এই যুগে ছেলেমেয়েরা লেখে কম। ধরুন, একটি রুটিন টাঙানো হলো। তারা মোবাইল দিয়ে ছবি তোলে। কেউ লেখে না। ধরুন, সাতটা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আর প্রত্যেকটির জন্য সময় মোটে ২০ মিনিট করে। তারা কুলাতে পারে না।’
কিন্তু পাসের হার বিষয়টি বাংলাদেশে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? নানা সময়ে সেই প্রশ্ন উল্টো তুলেছেন অনেকে।
লিবারেল মার্কিংয়ের প্রভাব?
শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে নানা সময়ে লিবারেল মার্কিং বা লিখলেই নম্বর দেওয়ার প্রবণতা বলে একটি বিষয় সম্পর্কে শোনা গেছে।’
যার কারণেও পাসের হার বেশি থাকতো বলে মনে করেন এই গবেষক। তার মতে, সেটিই বরং দেশের ক্ষতি করেছে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘তখন হয়ত লিবারেল মার্কিং বা লিখলেই নম্বর দেওয়ার একটা প্রবণতা ছিল। এভাবে অনেকেই ভালো ফল করেছে। এইটাই ছিল আমাদের শঙ্কার কারণ। যোগ্যতা ছাড়াও অনেকে ভালো ফল করেছে। তারা জাতির অ্যাসেট না হয়ে বরং বার্ডেন হয়ে যায়।’
অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এখন হয়ত আমরা আসল চিত্রটি পেতে শুরু করেছি। আমি মনে করি আমরা সত্যের দিকে যাচ্ছি। আর এতে শঙ্কার কিছু নেই।’
ফলাফল ঘোষণার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘যা বাস্তব ফল বেরিয়ে এসেছে, আমরা তাই করেছি। কেউ কেউ প্রথম প্রথম বলতেন যে আমরা নম্বর বাড়াই দিতে বলি। আমরা বাড়াই দিতেও বলি না। কমাই দিতেও বলি না।’
যখন বেশি পাস করেছে ছেলে-মেয়েরা তখন সবাই বিস্মিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যখন বেশি পাস করেছে সবাই বিস্মিত হইছে। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হইছি, বেশি পাস করাই দিচ্ছি এইজন্য। বেশি পাস করলেও আমাদের অপরাধ, কম পাস করলেও অপরাধ।’