কৃষিতে সাফল্য অব্যাহত রাখা ও এর অগ্রগতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
২২ জুলাই, রবিবার ময়মনসিংহে অবিস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে এর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যা, জন ও জমির স্বল্প অনুপাত, জলবায়ু ও পরিবেশগত অবস্থা, অবকাঠামো ও বিভিন্ন স্থাপনার বিস্তৃতিতে কৃষি জমি উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতাসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আজ বাস্তবতা। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। ’
এজন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার যুৎসই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। দুর্যোগ সহনশীল বিভিন্ন জাতের উদ্ভাবন করতে হবে।’
অবদুল হামিদ বলেন, ‘হাওড় এলাকার কৃষকদের বছরে একটি মাত্র ফসল বোরোর ওপর নির্ভর করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় আগাম বন্যার কারণে এ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে হাওড় এলাকার জনগণের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই বোরো ধানের উৎপাদনকাল কমিয়ে আনা গেলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
এ বিষয়ে কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
কৃষি উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কৃষির সকল মৌলিক ও প্রায়োগিক বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে দক্ষ কৃষিবিদ তৈরির পাশাপাশি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে এ বিশ্ববিদ্যালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অভিযাত্রায় অ্যালামনাই সদস্যদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য। কেননা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে কৃষির ভূমিকা আজও মুখ্য। বর্তমান সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরিতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, মাছ ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলেছে।
কৃষি ভর্তুকি, কৃষকদের অনুকূলে সার, সেচ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ ব্যাপক ভিত্তিতে কৃষি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই এ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘কৃষির সাফল্যকে অব্যাহত রাখতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষক অর্থাৎ উৎপাদনকারী পর্যায়ে ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কৃষকরা উৎপাদনে আগ্রহী হবে। বর্তমান সরকার গৃহীত কৃষি নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে দক্ষ কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানী তৈরিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি যত্নবান হবে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকববের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যাপক মতিউর রহমান, বাকৃবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আবদুর রাজ্জাক ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আবদুল মান্নান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম সাত্তার মন্ডল। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খান, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সম্পাদক কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা প্রমুখ।