ছোট ও জনমানবশূন্য দ্বীপ ভাসানচরে রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্থানান্তরের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটির মতে, দ্বীপটিতে গুরুতর বন্যার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাওয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বর্তমানে যে শিবিরে বসবাস করছে তার কাছে ছয়টি এলাকা চিহ্নিত করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। এসব এলাকায় ভালো ও নিরাপদ পরিবেশ পাওয়ার পাশাপাশি আড়াই লাখের অধিক লোকের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ সরকার ১ লাখ মানুষকে শিগগির ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু সেখানকার বন্যার সম্ভাবনা এবং চলাফেরার সীমাবদ্ধতা দ্বীপটিকে কার্যত ‘অভিবাসী আটক কেন্দ্রে’ পরিণত করবে।
‘বাংলাদেশ আমার দেশ নয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তের পাশে কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ উদ্বাস্তু কেন্দ্র জনাকীর্ণ কুতুপালং-বালুখালী শিবিরে রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তুদের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, উদ্বাস্তু শিবিরটি অস্থিতিশীল। এখানকার পরিবেশ উদ্বাস্তুদের রোগের মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং পারিবারিক ও যৌন সহিংসতার ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
ঘর মেরামত, নিরাপদ অবকাঠানো তৈরি ও সুরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বাস্তু ও সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টার পরও শিবির ও এর বাসিন্দারা এখনো বিপর্যয়কর আবহাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও জানায়, বাংলাদেশ সরকারের মতে- রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে শিবিরে আছে। এ জন্য সেখানে ঘূর্ণিঝড়-প্রতিরোধী ভবনসহ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে দিচ্ছে না সরকার। সেই সাথে দীর্ঘদিন ধরে থাকার মতো অন্যান্য অবকাঠমোর অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না।
ভাসানচর উদ্বাস্তুদের বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয় যে বিশেষজ্ঞারা জানিয়েছেন, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সময় বড় ধরনের জোয়ারে দ্বীপটি পুরোপুরি তালিয়ে যেতে পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মানবিক সাহায্য দেওয়ার কাজে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য দাতা দেশ ও আন্তঃসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা রোহিঙ্গাদের নিজ গৃহে নিরাপদ ও স্থায়ীভাবে ফেরানোর জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের দাবি করেছে।