প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারকে রাজি করানোর জন্য জাপানসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বোঝাতে হবে।’
৭ জুলাই, মঙ্গলবার সফররত জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী এসে এদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং তারা সংখ্যায় কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি হওয়ায় নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’
কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ এ কারণে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে কারণ তাদের চাষাবাদের জমিগুলোতে পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই আমরা স্থানীয় জনগণকেও সহায়তা প্রদান করছি।’
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের বিষয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদিও নিপেডো রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। তথাপি তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা রোহিঙ্গাদের কষ্ট লাঘব করতে কক্সবাজারে কাজ করে যাচ্ছে। তারাও দেশে ফেরার পর এসব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে।’
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো শেখ হাসিনাকে জানান, তিনি তার সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরে দেশটির রাষ্ট্রপতি উইস মিন্ট এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের নেতৃবৃন্দ তাকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাবার পর যাতে ভালো পরিবেশে তারা বসবাস করতে পারে, সেজন্য রাখাইন স্টেটে ঘরবাড়ি এবং স্কুল নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আমি তাদেরকে বলেছি।’
তারো কোনো বলেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো যাতে তাদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে পরিদর্শন করানো হয় এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে তারা যেন বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সেজন্যও তিনি মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন।
২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে৷ আর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন৷ এ ছাড়া আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা ২০১৬ সালের অক্টোবরের আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছে৷ এই চার লাখ রোহিঙ্গাকে এই চুক্তির অধীনে ফেরত নেওয়া হবে না৷ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে৷