আজ পবিত্র আরাফাত দিবস। এদিনটিকে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বের ২০ লাখের বেশি হজযাত্রী এদিন মিনা থেকে সমস্বরে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত করে ছুটে যাচ্ছেন আরাফাতের ময়দানের দিকে। এই সেই আরাফাতের ময়দান যেখানে দাঁড়িয়ে শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
আর তাঁর ওই ভাষণের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে ইসলাম। রোববারই দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে হজযাত্রীরা পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা।সেখান থেকে তারা রোববার দিনের শেষে যাত্রা শুরু করেন পবিত্র মিনার উদ্দেশে। সেখানে রাতভর ইবাদত বন্দেগির পরে আজ ভোরে যাত্রা করেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে। বার্তা সংস্থা এপি’র উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে অনলাইন গালফ নিউজ।
এতে বলা হয়েছে, আজ সোমবার আরাফাতের ময়দানে কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই সব হজযাত্রী একত্রিত হবেন। এখানে তারা জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন একত্রে। মসজিদে নামিরা থেকে এ নামাজের আগে খুৎবা দেয়া হবে। এই মসজিদটি সেই স্থানে নির্মিত যেখানে দাঁড়িয়ে হযরত মোহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। গভীর মনোযোগের সঙ্গে মসজিদে নামিরা থেকে দেয়া বয়ান বা খুৎবা শুনবেন হজযাত্রীরা।
এ ছাড়া তারা তপ্ত মরুভূমির আরাফাতের ময়দানে নানা রকম ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করবেন। এরপর তারা ছুটে যাবেন মুজদালিফার উদ্দেশে। সেখান থেকে তারা শয়তানের প্রতীকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন। তারপর তা ছুড়ে মারবেন শয়তানের ওই প্রতীকে। ৫ দিনের হজের আনুষ্ঠানিকতা হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমাবেশের অন্যতম। সক্ষম প্রতিটি মুসলিমের ওপর এই হজ জীবনে একবার হলেও বাধ্যতামূলক।
এবার হজব্রত পালন করতে মিশর থেকে গিয়েছেন এসাম এদ্দিন আফিফি। তিনি বলেন, এই পবিত্র স্থানে আসতে পেরে মহান আল্লাহর প্রতি আমি ভীষণ সন্তুষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সব ইসলামিক জাতিকে তিনি আরো ভালো রাখুন।
ইসলামিক দেশগুলো যেন তাদের শত্রুদের শত্রুতা কাটিয়ে উঠতে পারেন। উল্লেখ্য, হজ শেষে হাজীরা তাদের মাথা কামিয়ে ফেলবেন। নারীরা তাদের চুলের কিছু অংশ কেটে ফেলবেন। সারা বিশ্বে মুসলিমরা হজের শেষে ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। এদিনে মুসলিমরা গবাদিপশু কোরবানি দেন। আর গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন।
সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল মানসুর আল তুরকি বলেছেন, সারা বিশ্ব থেকে পবিত্র হজ পালন করতে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ সমবেত হয়েছেন সৌদি আরবে। এছাড়া প্রতি বছরের মতো রয়েছেন সৌদি আরবের হজযাত্রীরাও। তাদের কোনো রকম স্বাস্থ্যগত সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় ৩০ হাজার চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, নার্স ও টেকনিশিয়ানকে মোতায়েন করেছে।
সিরিয়ার আলেপ্পোর বাসিন্দা হিশাম মোস্তাফা (৫০) দেশ থেকে ৫ বছর আগে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তুরস্কে। তিনি একজন অ্যাকাউনটেন্ট। হজ করতে গিয়েছেন সৌদি আরবে। বলেছেন, জীবনে এই প্রথমবার গ্রান্ড মসজিদ ও পবিত্র কাবাকে দেখলাম। হজ করতে পারায় আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো অনুভূতি এটা। হজ করার জন্য ইয়েমেনের নায়িফ আহমেদ (৩৭) তার এক টুকরো জমি বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ইয়েমেনে যুদ্ধের কারণে হজের আনুষ্ঠানিকতায় খরচ অনেক বেশি। কিন্তু এখানে হজে এসে আমি খুশি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন যুদ্ধ থামিয়ে দেন।