কেমন আছেন?
এখানে টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালে যাঁরা অভিনয় করছেন, সেই শিল্পীদের ধর্মঘট চলছে। কোনো কাজ নেই। বাসায় বসে আছি।
ধর্মঘট কবে থেকে শুরু হলো?
গত শনিবার থেকে। আমাদের ‘রাণী রাশমণি’ সিরিয়ালের শুটিং হচ্ছে টালিগঞ্জের ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে। সকাল ১০টায় কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। আমরা মেকআপ নিতে যাই। গিয়ে জানতে পারি, কাজ হবে না, আর্টিস্ট ফোরাম ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
ধর্মঘটে কোনো কাজ হচ্ছে না?
একদম না। এখানে এ ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি। কেউ যদি কাজ করেন, তাহলে তাঁকে জরিমানা দিতে হবে। আরও অনেক শাস্তির ব্যাপার আছে।
শিল্পীদের ধর্মঘটে যেতে হলো কেন?
দিনের পর দিন ওভারটাইম করে প্রাপ্য টাকা না পাওয়া, বেতন নিয়ে জটিলতা৷ এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে শিল্পীদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই ঝামেলা চলছে। তবে গত ৭ জুলাই প্রযোজকদের সংগঠন ডব্লিউএটিপি আর কলাকুশলী সংগঠন এফসিটিডব্লিউইআইয়ের যৌথ বৈঠক হয়। এখানে কিছু সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু এ ব্যাপারে প্রযোজকেরা পরে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এর জের ধরেই গত শনিবার থেকে সব সিরিয়ালের শুটিং বন্ধ হয়ে যায়।
শিল্পীদের কাজের সময় নিয়ে কিছু সমস্যার কথা শুনেছিলাম।
হ্যাঁ, যাঁদের সঙ্গে চুক্তি আছে, সেই শিল্পীরা ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না। চুক্তির বাইরের শিল্পীরা সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা কাজ করবেন। তবে কোনো শিল্পীকে দিয়ে ১৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। আর মাসের যেকোনো সাত দিন একজন শিল্পীকে দিয়ে রাতে কাজ করানো যাবে। আসলে কিছু ব্যাপারে ছাড় দরকার। কিন্তু প্রযোজকেরা ছাড় দিতে চান না। তাঁরা এই সময়ের ব্যাপারটা মানতে চাচ্ছেন না।
অতিরিক্ত কাজ শিল্পীদের জন্য নিশ্চয়ই চাপ হয়ে যাচ্ছে?
এই চাপটা কিন্তু শিল্পীরা অনেক দিন থেকেই নিচ্ছেন। অনেক শিল্পী কাজ হারানোর ভয়ে কিছু বলেন না। দেখুন ভালো কিছু তৈরি করতে হলে অবশ্যই শিল্পীর জন্য কিছুটা ছাড় দিতে হবে। দর্শক কিন্তু পর্দায় শিল্পীকেই দেখছেন। শিল্পী যদি সময়মতো হাতে স্ক্রিপ্ট পান, সংলাপ মুখস্থ করতে পারেন, চরিত্র আর সংলাপ নিয়ে ভাবার সময় পান; তাহলে ক্যামেরার সামনে তিনি নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন, যা দেখে দর্শকও মুগ্ধ হবেন। কিন্তু শিল্পীকে মেশিন মনে করে তাঁকে দিয়ে শুধু কাজ করিয়ে নেন, তাহলে অল্প দিনেই এই শিল্পী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক খেটে যতটুকু অর্থ তিনি এখন উপার্জন করছেন, কয়েক বছর পর তার চেয়েও বেশি অর্থ ডাক্তারকেই দিতে হবে।
এটা তো রীতিমতো নির্যাতন। এসব দেখার কেউ নেই?
কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যার মতো কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। অনেক প্রযোজক ঠিকমতো পেমেন্ট দিচ্ছে না। দিনের পর দিন তাদের পেছনে শিল্পীদের ঘুরতে হয়। সবকিছু দেখার জন্য কাউকে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে।
টিভি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
টিভি চ্যানেলগুলোর কোনো অপরাধ নেই। তারাও তো অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে। এর জন্য যা প্রয়োজন, তা-ই করছে। টিভি চ্যানেলগুলো ঠিকই সময়মতো প্রযোজকদের টাকা দিচ্ছে। কিন্তু কিছু প্রযোজক শিল্পীদের সঙ্গে ঠিক আচরণ করছেন না। তাতেই যত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। শুনেছি, টিভি চ্যানেলগুলো প্রযোজকদের সঙ্গে বসেছে।
প্রযোজকদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে?
সোমবার এ নিয়ে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে আর্টিস্ট ফোরাম আর প্রযোজকদের মিটিং হয়েছে, যা কার্যত কোনো রেজাল্ট ছাড়াই শেষ হয়েছে। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে শিল্পীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রযোজকদের বিরুদ্ধে তাঁরা লড়াই করছেন না। প্রযোজকেরা যেন এর আগে হওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নেন, তাহলেই শিল্পীরা কাজ শুরু করবেন। শিল্পীরা কাজ শুরু করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
আপনি বাগেরহাটের ছেলে। ঈদে বাড়ি আসার সম্ভাবনা আছে?
এবার আসা হবে না। গত জুন মাসে মা এসেছিলেন। এখানে আমার সঙ্গে অনেক দিন থেকেছেন। মা বাড়ি ফিরে গেছেন। এখানে কাজের অনেক চাপ। ইচ্ছা করলেও এখন আসা যাবে না।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।