জসপ্রীত বুমরার ওই বলটা ব্যাটে খেললেই পারতেন জস বাটলার। পুরো ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুম বলবে, ওই বলটা ব্যাটে খেলাই উচিত। ৮৩তম ওভারে বাটলারের ছোট ওই ভুলেই ভারতের জয়টা নিশ্চিত হয়ে গেল। ক্রিকেটের গৌরবময় নিশ্চয়তা হয়তো অন্য কিছুর কথা ইঙ্গিত দিতে পারত। কিন্তু ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে বাটলারের ওই একটি সিদ্ধান্তই ভারতের মধ্যে জয়ের ক্ষুধাটা বাড়িয়ে দিল। জয়ের জন্য ভারতের দরকার শুধু একটা উইকেট।
অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া এক বলে ইচ্ছে করলেই ব্যাট দিয়ে খেলতে পাড়তেন বাটলার। কিন্তু অফস্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে যাবে মনে করে পা বাড়িয়ে দিলেন বাটলার। বলটি খেলার চেষ্টা করলেও হয়তো আম্পায়ারের মনে দ্বিধা থাকত। কিন্তু কোনো শট না খেলার চেষ্টাই বল প্যাডে আঘাত হানার সময় স্টাম্পে ছিল কি না এই প্রশ্ন থেকে আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানিকে মুক্তি দিয়ে দিল। কোনো দ্বিধা ছাড়া আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলেন বাটলার, তাতে দুঃখ আরও বাড়ল। আম্পায়ার্স কল। ফলে আউট হয়ে ফিরে যেতে হলো তাঁকে, অথচ সাদা চোখে যেমনটা মনে হচ্ছিল তাতে শট খেলার চেষ্টাতেই আম্পায়ার অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন।
সর্বনাশটা আরও নিশ্চিত হলো পরের বলে। দারুণ এক বলে জনি বেয়ারস্টোর অফ স্টাম্প উপড়ে গেল। ১৬৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটির তৃপ্তিটা মুহূর্তে উধাও ইংল্যান্ডের। হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে বুমরা। সে বলটা অবশ্য মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে দিলেন ওকস। কিন্তু শেষ হাসি বুমরাই হেসেছেন। পরের ওভারেই ঋষভ পন্তের কাছে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন ওকসকে।
পরের ওভারেই ইংল্যান্ডের শেষ ভরসা বেন স্টোকসও বিদায় নিলেন। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে লোকেশ রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে এলেন বাটলারকে সঙ্গী করে ইংল্যান্ডকে এতক্ষণ ম্যাচে রাখা অলরাউন্ডার। ৪ উইকেতে ২৩১ রান তোলা ইংল্যান্ড ২১ বলের মধ্যে ৮ উইকেটে ২৪১-এ পরিণত হলো। বাটলারের আউটের ডমিনো ইফেক্ট যাকে বলে। স্কোরটা ২৪৫/৯ হয়ে যাচ্ছিল ৮৭তম ওভারেই। বুমরার বলে কোহলির কাছে ক্যাচ দিয়েছিলেন আদিল রশিদ। কিন্তু টিভি আম্পায়ার নিশ্চিত করেন, বল ডেলিভারির সময় বুমরার পা দাগ অতিক্রম করেছিল। ফলে বাড়তি কিছুক্ষণ উইকেটে থাকার সুযোগ পেলেন রশিদ। কিন্তু ভারতের টেস্ট জয়ের নায়ক যে বুমরা হচ্ছেন সেটা ততক্ষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অথচ চতুর্থ দিনের নায়ক হওয়ার কথা ছিল বাটলারের। ৬২ রানে দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যান ফিরে গেছেন। এক প্রান্তে স্টোকস, অন্যপ্রান্তে বাটলার। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর বল হাতে দারুণ করলেও ব্যাটে পুরোনো স্টোকসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর বাটলার তো টেস্ট দলেই নিয়মিত নন। আজকের আগে টেস্টে মাত্র ৮টি ফিফটি আছে তাঁর। শেষ সেশনের আগেই ম্যাচ জিতে যাওয়া সম্ভব মনে হচ্ছিল তখন।
বাটলার ও খোলস সে চিন্তাটা ভুলিয়ে দিলেন। নিজের স্বভাবগত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চালিয়ে গেলেন এই উইকেটরক্ষক, স্টোকসও বাটলারের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে নিলেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পরে নেমেও আগে ফিফটি পেয়ে গেলেন বাটলার। ফিফটি পাওয়ার পরও নিজের ব্যাটিং চালিয়ে গেছেন, নিজের নবম ফিফটিকে প্রথম সেঞ্চুরির দিকে নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে খোলস ঢুকে গেছেন রক্ষণাত্মক খোলসে। ৫৬ রান থেকে বাটলার ৮২ রানে যাওয়া পর্যন্ত স্কোরারকে স্টোকসকে নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। এই পুরো সময়টায় খোলস ৪২ রানেই আটকে ছিলেন! একপর্যায়ে তো মনে হচ্ছিল, খোলস ফিফটি পাওয়ার আগেই বাটলারের সেঞ্চুরি হয়ে যাবে।
এমন বিপরীতমুখী ব্যাটিংয়েই ১৬৯ রানের জুটি গড়েছেন দুজন। কিন্তু বুমরার এক স্পেলেই সব প্রতিরোধ ভেস্তে গিয়েছে। ১০৬ রানে বাটলারের বিদায়ের পর স্টোকসও বিদায় নিয়েছেন ৬২ রানে। রশিদের শেষের ঝড় ৫৫ বলে ৩০ দর্শকদের আনন্দ খোরাক জুগিয়েছে। ব্যবধানও কিছুটা কমিয়েছে।