এশিয়া কাপের দল প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু অপেক্ষা ছিল সাকিব আল হাসানের জন্য। পবিত্র হজ পালন শেষে বুধবার রাতে দেশে ফেরেন সাকিব আল হাসান। এর আগেই মদিনাতে বসে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কথা বলেন সাকিবের সঙ্গে। সেখানেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল। গতকাল বিসিবি সভাপতি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, এশিয়া কাপে খেলছেন সাকিব।অথচ সাকিব ভুগছেন আঙুলের ইনজুরিতে। সব শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি টি-টোয়েন্টি সিরিজে মাঠে নেমেছিলেন ইনজেকশন নিয়ে। চিকিৎসকদের মতে অপারেশন করাতে হবে। তবে সাকিব যদি চায় তাহলে খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন। এর মানে ‘ইনজুরি আক্রান্ত’ সাকিবই নিবেন এশিয়া কাপের কঠিন চ্যালেঞ্জ। গতকাল বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান সাকিবকে এশিয়া কাপে রাখার প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাকিবের সঙ্গে সর্বশেষ আমার যেটা কথা হয়েছে মদিনাতে। ওখানে যেটা বললো ও এশিয়া কাপ খেলেই তারপরে সার্জারিটা করবে। আমি বলেছিলাম যদি সম্ভব হয় এশিয়া কাপ খেলে জিম্বাবুয়ের সফরের সময় অপারেশন করতে। কারণ এশিয়া কাপ তো খুব চ্যালেঞ্জিং। আমি মনে করে লাস্ট যত এশিয়া কাপ খেলেছি এবারেরটা সবচেয়ে কঠিন।’
আগের তিন এশিয়া কাপই হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। যেখানে শেষ দুটিতেই ফাইনাল খেলেছে টাইগাররা। তবে এবার এ আসর বসবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না এ কঠিন চ্যালেঞ্জে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের প্রয়োজনীয়তা কতটা। তাই বিসিবি সভাপতির অনুরোধেই ইনজুরি নিয়ে খেলতে রাজি হয়েছেন তিনি। এশিয়া কাপের ১৫ সদস্যের দলে জায়গা পাননি সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান ও এনামুল হক বিজয়। এছাড়াও অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েসকেও রাখা হয়নি দলে। তারা চারজনই ছিলেন সব শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে। তবে আস্থা রাখা হয়েছে স্ত্রীর যৌতুক মামলা থাকা তরুণ ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ওপর। তাই তাকে দলে রাখা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এ ঘটনার প্রভাব তার ওপর মানসিকভাবে থাকতে পারে বলেই মনে করেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। এছাড়াও ‘এ’ দলের হয়ে দারুণ পারফরম্যান্স করা মোহাম্মদ মিঠুনকে ফেরানো হয়েছে দলে। আর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন আরিফুল হক। এবার মিঠুনকে নেয়া হয়েছে সাব্বিরের পজিশনে, ছয়-সাত নম্বরের বিবেচনায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরে কিছু ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন মিঠুন। শেষ টি-টোয়েন্টিতে খেলেছিলেন ৩৯ বলে ৮০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। তার আগে আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে করেছিলেন ৫১ বলে ৮৭ ও ৭৩ বলে ৭৩ রান।
মাশরাফি বিন মুর্তজার দলে সাকিব ছাড়াও আছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এই পাঁচজনের কাঁধেই এবারের টাইগারদের এশিয়াকাপের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব। এছাড়াও দলের ব্যাটিংয়ে ভরসা রাখা হয়েছে আরেক তরুণ লিটন কুমার দাসের ওপর। তাকে এবার দেখা যাবে তামিম ইকবালের ওপেনিং পার্টনার হতে। এনামুল হক বিজয়কে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পর দলে ফিরে ৬ ম্যাচে তার অবদান মাত্র ৬৯ রান। ইমরুল ও সৌম্য এখনো যুদ্ধ করে যাচ্ছেন ফর্মে ফেরার। তাই তাকে নিয়ে ঝুঁকি নেয়া হয়নি। আরিফুল হক দলে সুযোগ পেলে সাত বা আটে ব্যাট হাতে ভূমিকা রাখার ক্ষমতা রাখেন। সেই সঙ্গে তার দারুণ ফিল্ডিংটাও বাড়তি পাওয়া। দলে রাখা হয়েছে আরেক তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তকেও। ব্যাটিং পজিশন তিনে সাকিব বা মুশফিক কোনো কারণে খেলতে না পারলে শান্ত হতে পারেন বিকল্প। ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরে দারুণ পারফরম্যান্সের পর দলে মুমিনুল হক সৌরভকে রাখার জোর দাবি উঠেছিল। কিন্তু তার ওপর আস্থা রাখেননি নির্বাচকরা।
অন্যদিকে পেস আক্রমণে অধিনায়কের সঙ্গী হিসেবে আছেন রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও আবু হায়দার রনি। শেষ সফরে দলে থাকা পেসার আবু জায়েদ রাহীকে রাখা হয়নি দলে। এছাড়াও স্পিনে সাকিবের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল ইসলাম অপু। সবশেষ অপু ওয়ানডে দলে থাকলেও ম্যাচ খেলা হয়নি তার। তবে ক্যারিবীয় সফরে দারুণ সফল ছিলেন মিরাজ।