বোলিংয়ে খুব গতি আছে তাও নয়। পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের মতো নেই বিশেষ কোনো অ্যাকশন। কিন্তু সীমাবদ্ধতার পরও আবু হায়দার রনির পেস আক্রমণ দারুণ কার্যকর। ২০১২-তে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের মাত্র এক ম্যাচেই ১০ রানে ৯ উইকেট নিয়ে এসেছিলেন আলোচনায়। এরপর চতুর্থ বিপিএল-এ মাশরাফি বিন মূর্তজার সঙ্গী হয়ে নিজেকে আরো মেলে ধরেন। সেই সুবাদে তারপরের বছর ২০১৬-তে সুযোগ আসে জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে খেলার। তবে যতটা আশা ছিল তার কাছে ১০ টি-টোয়েন্টিতে সেটি পূরণ করতে পারেননি। ৪৮.৬০ গড়ে নিয়েছেন মাত্র ৫ উইকেট।তবে সব শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তাকে ছন্দে দেখা গেছে। মাত্র একটি উইকেট নিলেও রান খরচে ছিলেন বেশ কৃপণ। এবার তাকে রাখা হয়েছে এশিয়া কাপের মূল স্কোয়াডেও। তাই তার সামনে এখন ওয়ানডে অভিষেকের সুযোগ। কতটা প্রস্তুত তিনি এ ফরমেটে নিজেকে মেলে ধরতে! তার উপরে অস্থা রাখলে তা পূরণ করতে পারবেন তো? ২২ বছর বয়সী রনি অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী। গতকাল অনুশীলনের একফাঁকে রনি বলেন, ‘আমার আত্মবিশ্বাস লেভেল এখন বেশ ভালো আছে। এখন পর্যন্ত যদি বলেন- বোলিং খুব ভালো হচ্ছে। শেষ দু’টি সিরিজে খুব ভালো বোলিং হয়েছে। আমি চেষ্টা করবো যেন ওই ধারাটাই বজায় রাখতে পারি। এই কারণে অনুশীলনে অনেক পরিশ্রম করছি। যদি সুযোগ পাই তাহলে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবো।’
তবে বলা যত সহজ করা যে তারচেয়েও কঠিন তা বেশ ভালোই জানেন রনি। শেষ ১০ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন। তাই ওয়ানডের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন কঠোর অনুশীলনের মধ্যদিয়ে। সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দিতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। তাই ঘাম ঝরাচ্ছেন নিজেকে প্রস্তুত রাখতে। সেই সঙ্গে বোলিংয়ে বৈচিত্র্যও আনতে চান এই পেসার। ব্যাক অফ হ্যান্ডসের স্লোয়ার এর পাশাপাশি নতুন কৌশলও রপ্ত করতে চাইছেন। যা অনেকটা রুবেল হোসেনের বাটারফ্লাই এর মতোই। আর ডেথ ওভারের সবচেয়ে ইয়র্কারে যেন নিখুঁত হয় সেই চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের এ চেষ্টা নিয়ে রনি বলেন, ‘ভেরিয়েশন নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমি যেমন আগে শুধু অফ কাটার মারতাম। এখন ব্যাক অফ হ্যান্ডস, নাকল বল এবং ইয়র্কার করার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি অনুশীলনে পারফেকশন আনার জন্য। এটি তো একদিনে হবে না। ইনশাআল্লাহ্ অনুশীলন করতে করতে ভালো হবে।’
গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে ম্যাচের বিভিন্ন পরিস্থিতি নির্ধারণ করে অনুশীলন চালিয়েছে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকা ১৫ টাইগার ক্রিকেটার। এ অনুশীলনে রনিও বেশ সন্তুষ্ট। তার মতে নিজেদের স্কিল বাড়াতে যথেষ্ট সহায়তা করবে এমন অনুশীলন। তিনি বলেন, ‘এটি অনেক ভালো একটি অনুশীলন হয়েছে। কেননা দেখা যায় এই পরিস্থিতিগুলো ম্যাচে অনেক সময়ই আসে। দেখা যায় ১ ওভারে আপনার ৭ কিংবা ৯ রান দরকার হয়। তখন সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। আর ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রেও এটি একটি চ্যালেঞ্জের কাজ যে ১ ওভারে কীভাবে ৯-১০ রান নেবো আমরা। এই অনুশীলনটি যদি আমরা করি তাহলে আমাদের আত্মবিশ্বাসের লেভেলটি বেড়ে যাবে আর আমাদের মাথায় আসবে যে, এই পরিস্থিতি কীভাবে সামলাতে হবে।’ কত সহযোগিতা হচ্ছে এ অনুশীলন থেকে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে রনি বলেন, ‘ধরেন আমি কালকে (সোমাবার) একটি ওভার করেছি যখন ৬ বলে ৯ রান আটকাতে হবে। দেখা গেল প্রথম ওভারে একটি বাউন্ডারি হয়েছে। এরপর আমি পরিকল্পনা করেছি যে বাকি ৫ রান কিভাবে আটকানো যায়। ওই সময় দেখা যায় ইয়র্কারগুলো কীভাবে আমি কার্যকর করতে পারবো, মানে পেসের পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে বোলিং করা এগুলোই কাল অনুশীলন করেছি।’ এরই মধ্যে ছুটি কাটিয়ে এশিয়া কাপ মিশনে শিষ্যদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। গুরুকে কাছে পেয়ে রনিরও বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। নিজের অপূর্ণতাগুলো কোচের কাছ থেকে শিখে নিতে পারবেন বলেই মনে করেন। কোচকে নিয়ে রনি বলেন, ‘আসলে মাস্টার (ওয়ালশ) তো আজকেই এলেন। তাঁর সঙ্গে এখনো কথা হয়নি আমাদের। এটি নিয়ে সবাই কথা বলছে যে কীভাবে রিষ্ট (কবজি) ব্যবহার করা যায়। নতুন যারা বোলার আছে শরিফুল, খালেদ ওদের উচ্চতা ভালো আছে। ওদেরকে বলা হচ্ছে যে কীভাবে রিষ্ট ব্যবহার করা যায় তেমনটি পারলে বাউন্সটি একটু বেশি হবে। এটি আসলে একটি সুবিধা, সুতরাং এটি নিয়ে সামনে সবাই কাজ করবে।’