ঢাকার কেরানীগঞ্জে সালমা অক্তার (৩৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্বামীর পরিবারের দাবি, হার্টষ্ট্রোক করে মারা গেছে। তবে নিহতের ভাইদের অভিযোগ হত্যা করে ষ্ট্রোকে মারা গেছে বলে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে স্বামীর যৌতুক লোভী স্বজনরা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার বন্ধ ছাটগাও এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই হাজি মোঃ লিটন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় নিহতের ননদ মোসাঃ সাহিদা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই মোঃ লিটন জানান, প্রায় আট-নয় বছর আগে শরিয়ত মোতাবেক আমার বড় বোন সালমা অক্তারের সাথে একই এলাকার কাদের হাজির ছেলে মনোয়ার হোসেন বাবুর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বাবু আমার বোনকে টাকার জন্য প্রায় মারধর করতো। আমি বোনের সুখের জন্য কয়েক দফায় প্রায় চার লাখ টাকা দেই। এর মধ্যে তাদের ঘরে আব্দুল্লাহ (০৬) নামের একটি পুত্র সন্তান আসে। এর এক পর্যায়ে বাবু সৌদি আরব চলে যায়। সেখানে যাওয়ার পর বাবু তার স্ত্রীর (আমার বোন) কাছে কোনো টাকা-পয়সা না দিয়ে মা-বোনদের কাছে দিতেন। তারা আমার বোন ও আব্দুল্লাহর কোনো খবর দিতেন না। আমার বোন তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা চাইলে গালমন্দ ও মারপিট করে বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে বলতেন। এ নিয়ে এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ কয়েকবার বিচার সালিশ করেছে।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায়ও আমার বোন আমার বাড়িতে টাকার জন্য আসে। আমি বাড়িতে না থাকায় রাত সাড়ে আটটার সময় শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। লোক মারফত জানতে পারি আমার বোন টাকা নিয়ে না যাওয়ায় তার শ্বাশুড়ি, দুই ননদ ও দেবররা নির্যাতন করে মেরে স্থানীয় সাজেদা হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা খবর পেয়ে সাজেদা হাসপাতালে গিয়ে আমার বোনকে না দেখে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সাথে সাথে আমাদের স্বজনদের খবর দিয়ে আমরা মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে আমার বোনের মৃতদেহ দেখতে পাই।
থানা হাজতে থাকা নিহত সালমার বড় ননদ (স্বামীর বড় বোন) মোসঃ সাহিদা বেগম জানান, তার সাথে ছোট ভাই সাহিদের ঝগড়া হয়। ছোট ভাইয়ের বউ নিহত সালমার সাথে কোনো প্রকার ঝগড়া হয় নাই। সে রাত সাড়ে আটটার সময় বাবার বাড়ি থেকে এসে ছোট ভাই সাহিদের পক্ষ নিয়ে আমার সাথে উচ্চ বাচ্চ করে তার নিজ ঘরে চলে যায়। এমনিতেই তার হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে। পড়ে আমরা তার ঘরে ডাকতে গেলে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বাড়ির পাশে সাজেদা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে তারা মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে আমরা মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তাররা সালমাকে মৃত বলে জানায়।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সাইদুজ্জামান বাচ্চু জানান, ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই নিহতের ননদ সাহিদা বেগমকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাই। তবে লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের জানান, নিহতের গৃহবধূ একজন হার্ট্রের রোগী ছিলেন। তার শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে এ রোগের অনেক কাগজপত্র পাওয়া গেছে। নিহতের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি তাই আমরা সঠিক ভাবে বলতে পারছি না এটা হত্যা না ষ্ট্রোকে মারা গেছে।
তিনি আরো জানান, নিহতের ভাইদের অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি হত্যা মামলা নেওয়া হয়েছে। নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে হত্যা না ষ্ট্রোকে মারা গেছে।