এলএনজি আমদানির প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ বাদে অন্য ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, সার কারখানা ও শিল্প খাতে এই দাম বৃদ্ধি হবে। তবে, এই বৃদ্ধিটা যেন ‘সহনীয় পর্যায়ে’ হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘নেট মিটারিং’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে গ্যাসের দাম বাড়ানোর নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, অতিসত্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। তবে আমরা বিইআরসিকে (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) বলেছি, দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে।
তিনি বলেন, মহেশখালীতে দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল থেকে শুরুতে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। ভাসমান এই টার্মিনাল থেকে ৫০০ এমএমসিএফটি গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে। ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের আরো একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে বেসরকারি কোম্পানি সামিট পাওয়ার।সব মিলিয়ে আমদানি করা গ্যাস আসতে শুরু করলে ধীরে ধীরে দাম বাড়ানো হবে বলেও ইঙ্গিত দেন জ্বালানি উপদেষ্টা।
গত জুনে এলএনজি আমদানি চূড়ান্ত হওয়ার পরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়। উত্তোলন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ছাড়া সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। জুনের ১১ তারিখ থেকে দাম বাড়ানোর উপর শুনানি শুরু করে বিইআরসি। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় দাম ৭ টাকা ৩৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে কোম্পানিগুলো। অর্থাৎ বর্তমানের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বিইআরসিতে দেয়া এক উপস্থাপনায় দেখানো হয়েছে, ২৫ টাকা ১৭ পয়সা দরে কিনে এর সঙ্গে ভ্যাট, ব্যাংক চার্জ, রিগ্যাসিফিকেশন চার্জসহ নানা ধরনের চার্জ যোগ করে আমদানি করা এলএনজির বিক্রয়মূল্য মূল্য দাঁড়াবে ৩৩ টাকা ৪৪ পয়সা। এই অঙ্ক দেশে বর্তমানে বিক্রীত গ্যাসের চার গুণ বেশি। নতুন গ্যাস সরবরাহে পাইপলাইন নির্মাণে বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে জিটিসিএল প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ দশমিক ২৬৫৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দশমিক ৪৪৭৬ পয়সা অর্থাৎ ৬৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর শুনানি হয়।
অন্যদিকে, জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করা গেলে প্রচলিত দাম বহাল রেখেই আমদানি করা এলএনজির দাম সমন্বয় সম্ভব বলে মত দেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। শুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার। ওই হিসেবে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বিইআরসিকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুন কর্মকারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মনোয়ার মিজবাহ মইন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সদরুল হাসান।