দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা নদীর ওপর চারটি পিলার দেখে আসছিল উত্তর সুরমার প্রায় চার লাখ মানুষ। অ্যাপ্রোচ ও নেভিগেশন ব্যবস্থার ত্রুটির জন্য ব্রিজটি নির্মিত না হওয়ায় নদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা চারটি পিলার এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছিল। অবশেষে শিল্পশহর ছাতক ও দোয়ারাবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে শিল্পশহর ছাতকের দূরত্ব কমানো এবং ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ, ছাতকের শিল্প কারখানায় উৎপাদিত পণ্য সড়কপথে বহনের সুবিধার জন্য সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এই দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট ছাতকে সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির পিলারগুলো নির্মিত হওয়ার পর ওই সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

জানা যায়, জমি অধিগ্রহণ ও বাজেট স্বল্পতাসহ বিভিন্ন জটিলতায় সেতু নির্মাণ কাজ বছরের পর বছর বন্ধ ছিল। ২০১৬ সালে সেতুর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে ১১৩ কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হওয়ার পরই আশার আলো দেখা দেয়। বর্তমানে সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। কাজের গতি ঠিক থাকলে আগামী বছরের আগস্টের মধ্যেই স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে ছাতক-দোয়ারা উপজেলাবাসীর।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সেতুর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। পরে এর নির্মাণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি আরো ২৭ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।

সুরমা সেতুর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে গত বছরের ৩০ আগস্ট কাজের দপ্তারাদেশ দেওয়া হয় জন-জেবি নামের একটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শুরু করলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বেশ কয়েক মাস কাজ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেতুসংলগ্ন এলাকায় এরই মধ্যে ২০.৪৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সেতুর স্টিল স্ট্রাকচার আমদানিতে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। সেতুর দুই পাড়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরিতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ভূমি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বাবদ খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকাসহ সেতুর মোট নির্মাণ খরচ ধরা হয় প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।

এরই মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সেতুসংলগ্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুই শতাধিক লোকজনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশ থেকে সেতুর স্টিল স্ট্রাকচার আমদানির জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কাজের গতি ঠিক থাকলে আশা করছি, আগামী বছরের আগস্টেই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

ছাতক- দোয়ারাবাজারের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘ছাতকে সুরমা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সেতু তৈরির প্রাক্কালন তৈরির নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। পরে বিএনপি সরকারের শেষ সময় রাজনৈতিক নির্বাচনী মওকা হিসেবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও নানা অসঙ্গতির কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে প্রকল্পটি বাতিল হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দ্রুতগতিতে কাজ চলেছে। আশা করছি শিগগির সম্পন্ন হবে।