রাজধানী ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি)-এর আওতায় বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বুধবার অনুষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জাপান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এই রেলপথটি নির্মাণ করবে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন’। রেলপথ নির্মাণ ছাড়াও ডিপো নির্মাণ, রোলিং স্টক ও কোচ ক্রয় বাবদ প্রকল্পের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫০ কোটি ডলার। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই চীনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর আওতায় প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রায় ২ কোটি মানুষ বসবাসকারী ঢাকা শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। কিন্তু শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থা সে তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। মারাত্মক ট্র্যাফিক জ্যাম ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা। ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরের জন্য একটি যুগোপযোগী ও দক্ষ গণপরিবহন ব্যবস্থা এখন অত্যন্ত জরুরি। এ প্রেক্ষিতে ঢাকার ট্র্যাফিক জ্যাম কমিয়ে আনতে রেলওয়ের মত গণপরিবহন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ করা হলে তা ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ ও উন্নত করবে। এ লক্ষ্যে ‘ঢাকা সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ’ অর্থাৎ ইস্টার্ণ বাইপাসের এলাইনমেন্ট ব্যবহার করে সংশোধিত পরিবহন কৌশল পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ইনার সার্কুলার রোডের উপর দিয়ে এলিভেটেড বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে টঙ্গী, উত্তরা, বিরুলিয়া, গাবতলী, শঙ্কর, নবাবগঞ্জ, বাবুবাজার, সদরঘাট, শ্যামপুর, ফতুল্লা, চাষাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা, কয়েদ পাড়া, বেরায়েত, পূর্বাচল ও তেরমুখ এলাকার বিপুল জনগোষ্ঠী ঢাকা শহরের মধ্যে প্রবেশ না করেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের কর্মস্থল কিংবা গন্তব্য স্থানে যাতায়াত করতে পারবে।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ‘বুড়ীগঙ্গা নদীসহ ঢাকা মহানগরীর চারপাশের প্রবাহমান নদীগুলো পুন:উদ্ধার এবং ঢাকা মহানগরীর চারদিকে বৃত্তাকার নদী পথ ও সড়ক পথ চালুকরণ’ শীর্ষক সভায় ঢাকা সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অর্থাৎ ইস্টার্ন বাইপাস সড়কের বহুমুখী ডিজাইনে রেললাইন অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর ওই বছরই ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত অপর এক বৈঠকে ঢাকা সার্কুলার রোড ফেজ-১ ও ফেজ-২-এর ডিজাইনে রেলের ডাবল ট্র্যাক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জনপথ অধিদফতরের ভূমি ব্যবহার করা হবে বলে সূত্র জানায়।