আনিসুর রহমান তপন : ৯ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন, চলতি অর্থ বছরে তা ৫ লাখ মে. টন ছাড়িয়ে যাবে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। মঙ্গলবার সচিবালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে মৎস্যখাতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে দাবি করে মৎস্যমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এক্ষেত্রে ইলিশ মাছের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের ইলিশ উৎপাদনের শতকরা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়।
মৎস্য খাতের ধারাবাহিক সাফল্যের উল্লেখ করে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, একই সময়ে সার্বিক মাছের উৎপাদন ২৭ লাখ ১ হাজার মে. টন থেকে বেড়ে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মে. টনে উন্নীত হয়েছে। যা গত বছরের উৎপাদন-লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন বেশি। গত বছর লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৪০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর ইলিশের উৎপাদন যেমন ৫ লক্ষ টন ছাড়িয়ে যাবে তেমনই মাছ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়ে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মে. টন হবে আশা করছি। তিনি বলেন, দেশে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩১ ভাগ মানুষ মৎস্যখাতে জড়িত। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষা ভাবে এ খাতের উপর নির্ভরশীল প্রায় ১১ ভাগ মানুষ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশের অধিক জানিয়ে মৎস্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মোট মৎস্য খাতের শতকরা ১২ ভাগ আসে ইলিশ থেকে। কাজেই একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। আর সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ।
ইলিশ সংরক্ষনে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ৪০ কেজি হারে ৪ মাসের জন্য ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪টি জেলে পরিবারের প্রতি পরিবারকে মোট ৩৯ হাজার ৭৮৮ টন চাল দেয়া হয়েছে। গত অর্থ বছরে যা ছিল মাসিক মোট ৩৮ হাজার ১৮৭ দশমিক ৬৮ টন। জাটকা সমৃদ্ধ ১৭ জেলার ৮৫ উপজেলায় জাটকা আহরণ বন্ধ রাখতে সরকার ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪টি জেলে পরিবারকে এই সহায়তা প্রদান করে।
ইলিশের ভৌগোলিক নিবন্ধনের কথা উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আইনানুগ কার্যক্রমশেষে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের ভৌগোলিক নিবন্ধন (জিআই সনদ) প্রদান করে। বাংলাদশেরে জাতীয় মাছ ইলিশের ভৌগোলিক নিবন্ধন সম্পন্নের ফলে বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও গুণগত মানসম্পন্ন ইলিশ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে। ইতিপূর্বে ইলিশের কোনো ব্র্যান্ডিং ও ট্রেডমার্ক ছিল না। এখন বিদেশের ক্রেতারা সহজেই বাংলাদশী সুস্বাদু ইলিশমাছ শনাক্ত করতে পারবেন। সরকার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ইলিশের ভ্যালু-অ্যাডেড পণ্যের চাহিদার প্রেক্ষিতে ইলিশের স্যুপ, নুডলস ও পাউডার তৈরির প্রযুক্তি আবিস্কার করে ইতিমধ্যেই তা বাজারজাতও শুরু করেছে।