‘হবে তো?’ -রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে অফিস-আদালত। হাট থেকে খেলার মাঠ সর্বত্র একটাই প্রশ্ন। আর এ প্রশ্নের জন্ম বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ ঘিরে। এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ আজ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ফাইনাল খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টায়। ব্যাট-বলের লড়াই শুরুর আগেই মরু শহর ভীষণ উত্তপ্ত। সেই উত্তাপে ঊর্ধ্বমুখী টাইগার ক্রিকেটের ভক্তদের উত্তেজনার পারদও। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরমেটে এশিয়া কাপের শেষ চার আসরে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় ফাইনাল।কিন্তু দুর্ভাগ্য! একবারও শিরোপা উৎসব করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১২’র আসরে টাইগাররা নিজেদের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ রানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে। এরপর ২০১৬তে টি-টোয়েন্টি ফরমেটের এশিয়া কাপেও ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল এই ভারত। সেবারও হয়নি। শুধু তাই নয় টাইগারদের জন্য কোনো টুর্নামেন্টের ট্রফি যেন সোনার হরিণ। আজ ফের সুযোগ এসেছে সব বদলে নতুন ইতিহাস গড়ার। দেশ যখন কল্পনায় আঁকছে ট্রফির ছবি, তখন দলের অন্যতম সদস্য মুশফিকুর রহীম স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, ‘অবশ্যই আমরা পারবো।’ তার এই আত্মবিশ্বাসের কারণ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার মন্ত্র, ‘হয় মার নয় মর।’ ফাইনালের আগেও দলের প্রতিটি সদস্যের প্রতি এই একই আহ্বান করেছেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
১৫ই সেপ্টেম্বর, দুবাইয়ে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ দল। শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে উড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার পথ তৈরি করে ফেলে। এরপর লঙ্কানদের বিদায়ে সুপার ফোরে ওঠে। কিন্তু গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বড় হোঁচট খায় দল।
কিন্তু হাল ছাড়েননি টাইগার অধিনায়ক। স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ফাইনাল খেলা সম্ভব। পরের ম্যাচেই আফগানদের বিপক্ষে ৩ রানের লড়াকু জয় তুলে বাঁচিয়ে রাখে স্বপ্ন। সব শেষ বুধবার শক্তিশালী পাকিস্তানকে ধুমড়ে মুচড়ে ৩৭ রানের জয়ে নিশ্চিত করে তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা। তবে আগের দুই আসরেই নয়, কোনো আসরেই ট্রফি না পাওয়ার আক্ষেপ তাড়া করে ফিরছে এ ম্যাচের আগেও। তবে মাশরাফি নিজেকে ট্রফি দিয়ে মূল্যায়ন করতে রাজি নন কোনোভাবেই। ‘একটা ট্রফি দিয়ে আমি আমার নিজেকে বিচার করি না। ক্রিকেট একটা ট্রফির জন্য খেলিনি। হ্যাঁ, বাংলাদেশের জন্য একটা ট্রফি দরকার। আমার বিশ্বাস হয়তো বা কোনো একদিন ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ পারবে। এইজন্য বললাম কারণ তরুণ প্রজন্ম যারা ক্রিকেটের দিকে আসছে। যারা এখন দলে আছে, যারা অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-১৬ খেলছে তারা হয়তো আরো বোস্টআপ হবে। এক্ষেত্রে হয়তো বলতে পারেন বাংলাদেশের একটা ট্রফি দরকার। সেটা এখনি বা কাল না হলে সমস্যা সেটা না।’
এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে ৩৫ বার। যেখানে ১২ বারই খেলেছে এশিয়া কাপে। তবে এ আসরে জিততে পেরেছে শুধু একবারই। তবে সব শেষ ২০১৫তে নিজেদের মাটিতে ওয়ানডেতে ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল দল। সেই বছরই আবার হারতেও হয়েছে এশিয়া কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে। পরের বার চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতেও দেখেছে পরাজয়। তাই বলতে গেলে শেষ দুই ওয়ানডে ম্যাচে হারের স্মৃতিই আছে মাশরাফিদের। বলার অপেক্ষা রাখেনা ভারতপ্রাপ্ত অধিনায়ক রোহিত শর্মার ভারত বিরাট কোহলিকে ছাড়াও কতটা শক্তিশালী। এশিয়া কাপে প্রথম রাউন্ডে হংকং ও পাকিস্তানকে হারিয়ে তারা সুপার ফোর নিশ্চিত করে। সেখানে শুরুতেই বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়ে তুলে নেয় বড় জয়। পরের ম্যাচেই পাকিস্তানকেও হারায় বড় ব্যবধানে। কিন্তু তাদের বড় ধাক্কা দেয় আফগানিস্তান। ফাইনাল নিশ্চিত হওয়াতে দলের পাঁচ সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়াই মাঠে নেমেছিল। ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ শেহজাদের সেঞ্চুরিতে আফগানরা করে ২৫২ রান। কিন্তু জবাব দিতে নেমে হারতে হারতে ম্যাচ ‘টাই’ করে মান বাঁচায় ভারত। আজ তারা মাঠে নামবে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে।
অন্যদিকে এ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অন্য চিন্তার নাম টপ অর্ডার ও তরুণরা। বিশেষ করে ওপেনিংটাই এখন টাইগারদের ভয়ের কারণ। তামিম ইকবালের পরিবর্তে দলে সুযোগ পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত তিন ম্যাচে ব্যর্থ। আরেক ওপেনার লিটন কুমার দাস ৫ ম্যাচে একটি ইনিংসেই ছুয়েছেন দুই অংক। শান্তর পরিবর্তে দলে আসা সৌম্য সরকারও ব্যর্থতার তালিকা দীর্ঘায়িত করেছে আর দলকে ফেলেছেন বিপদে। তবে সেখান থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের ত্রাতা হয়েছেন মুশফিকুর রহীম। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৯৯ রানে আউট হন। কিন্তু দুই ম্যাচেই তার ব্যাটে দল জিতেছে। সাকিব না থাকাতে মুমিনুল এসেছিলেন। কিন্তু সেও নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ। আজ দলে আসতে পারে একটি পরিবর্তন। রুবেল হোসেনের পরিবর্তে দলে ফিরতে পারেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। কারণ ভারতের বিপক্ষে হয়তো বাঁ-হাতি স্পিনার ছাড়া খেলার ঝুঁকি নেবে না দল।