রিমা দাসের ‘ভিলেজ রকস্টারস’-এর গল্প এমনভাবে বলা যে কখনও কখনও আপনার মনে হতে পারে ১০ বছরের ধুনু ও তার সঙ্গীরা, আসামের প্রত্যন্ত গ্রামে যেভাবে জীবন কাটায় তেমনটা যদি আপনিও করতে পারতেন- তাহলে বেশ হতো। ছোট্ট ছোট্ট শিল্পী, কাদাপানি, তাদের মনের মতো কাজ করতে পারার স্বাধীনতাই ছবিটার মধ্যে নিমগ্ন থাকতে বাধ্য করবে। সেই আকাশের দিকেই তো আপনি তাকিয়ে রয়েছেন যেদিকে ওরা তাকাচ্ছে। ওদের প্যাডেলেই ভর করে যেন আপনি ঘুরছেন দুনিয়া। সেই সাথে ধুনুর সমস্ত বেদনা হয়ে যাচ্ছে আপনার।
আগামী প্রজন্মের গল্প হিসাবে বলা এই ছবি। সেই দিক থেকে অনবদ্য স্টোরিলাইন আর খুব সুন্দরভাবে সাজানো ‘ভিলেজ রকস্টারস’। সিঙ্গেল মাদার এবং তাঁর সন্তানকে নিয়েই এগিয়েছে ছবির গল্প। রিমা দাস প্রায় একাহাতে তৈরি করেছেন এই ছবি। নিজেই চিত্রনাট্য লিখেছেন, ক্যামেরা ধরেছেন, পরিচালনা করছেন, প্রযোজনা ও সম্পাদনাও তাঁরই।
ছবিতে ধুনু একটি মেয়ে, যে দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হতে হতে নিজেই বিপদকে প্রতিহত করার শিক্ষা নিয়েছে জীবন থেকে। কিন্তু এই দারিদ্র্য দমিয়ে রাখতে পারেনি তার রকব্যান্ড গড়ে তোলার স্বপ্নকে। গিটার সে কিনবেই কোনো না-কোনো দিন। ছবিটায় যেন নিজের গল্পই বলে চলেছেন রিমা।
পয়সা ও লোকবলের অভাবের জন্য আলোর ব্যবহার করতে পারেননি। কিন্তু প্রকৃতির আলোও যে পর্দায় এত সুন্দর হয়ে উঠতে পারে তা বড় বড় বলিউড ছবি জানান দেয়নি। কী অসাধারণ ক্রাফ্টের কাজ কিন্তু কোনো কিছুই জোর করে দৃষ্টি আকর্ষণ করে না।
ছবিতে ধুনু টমবয়, সারাক্ষণ ছেলেদের সঙ্গে খেলে বেড়ায়, তবে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে হঠাৎই মেয়ে হওয়ার উপলব্ধিটাও দারুণ দেখিয়েছেন পরিচালক। আবার আছে ধুনুর মায়ের (বাসন্তী দাস) দৃঢ় নারীবাদী সত্ত্বা, বলার ক্ষমতা যে মেয়ে যা হতে চায় সেটাই হবে।
ছবিতে গরিব হওয়ার যন্ত্রণাটা দেখানো হয়েছে, আপনার গতেবাঁধা মনে হতেই পারে। তবে গরিব হয়েও খুশি থাকতে চাওয়ার তাগিদ অবাক করবে। প্রতিকূলতাকে জয় করার প্রচেষ্টা ভাবাবে।
আসলে পরিচালক সবর্ক্ষণ তাঁর ছবির চরিত্রগুলোকে স্বাধীনতার অনুভূতিটা পেতে দিয়েছেন।
রিমা দাস পরিচালিত ছবি ‘ভিলেজ রকস্টারস’ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত। ৬৫তম জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে এই ছবি শুধু সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কারই জেতেনি, সঙ্গে তকমা জুড়েছে সেরা শিশুশিল্পী, সেরা সাউন্ড রেকর্ডিস্ট ও সেরা সম্পাদনারও।