স্বপ্না চক্রবর্তী : সংস্কার কাজে সক্ষম না হওয়ায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র ২১৯টি পোশাক কারখানার ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) সেবা হারাচ্ছে। ইতিমধ্যে পোশাক মালিকদের দুই সংগঠনকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। ইউডি সেবা বন্ধ হলে বন্ধ হয়ে যাবে এসব কারখানা। আর বেকার হয়ে যাবে কারখানাগুলোতে কর্মরত প্রায় ১ লাখ শ্রমিক।
জানা যায়, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও কারখানা সংস্কারে কোনো অগ্রগতি না থাকায় এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ২১৯ টি কারখানার মধ্যে ১৩৪ টি বিজিএমইএর সদস্য, ৭৪টি বিকেএমইএ’র এবং বাকি ১১ টি কারখানা উভয় সংগঠনেরই সদস্য। ডিআইএফই সূত্রে জানা যায়, তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলোকে রফতানি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মালিক প্রতিনিধি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এর কাছ থেকে কাঁচামাল ব্যবহারের উপযোগিত সনদ নিতে হয় যা ইউডি সেবা হিসেবে পরিচিত। আর ইউডি সনদ না থাকলে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না কোনো কারখানা।
২১৯টি কারখানার ইউডি সেবা বন্ধে ইতিমধ্যে নির্দেশনা হাতে এসেছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা প্রথমে তালিকায় থাকা কারখানাগুলোর মালিকদের সাথে কথা বলে দেখবো। যদি মালিকপক্ষ সংস্কারে সত্যি সক্ষম না হয় তাহলে আমরা ওইসব কারখানার ইউডি সেবা বন্ধ করে দেবো। একই কথা বললেন পোশাক মালিকদের অপর সংগন বিকেএমইএ সহ সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। তিনি বলেন, রানা প্লাজার পর এত দিনেও যারা কারখানার সংস্কার কাযক্রম শেষ করতে পারে নি তারা আর পারবে বলে মনে হয় না। তবুও আমরা তাদেরকে নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে বসবো। গুটিকয়েক মালিকের চাইতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি এরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করতে না পারে তাহলে এদের ইউডি সেবা বাতিলে আমাদের যা করণীয় আমরা করবো।
প্রসঙ্গত, রানা প্লাজা ধসের পর জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিপিএ) আওতায় অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও জাতীয় উদ্যোগে শুরু হয় পোশাক কারখানা মূল্যায়ন কার্যক্রম। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আওতাধীন কারখানাগুলোর ৮৫ শতাংশ ত্রুটি সংস্কার হলেও জাতীয় উদ্যোগের আওতায় শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন করেছে ১ শতাংশেরও কম কারখানা। এর মধ্যে একাধিক সতর্কতা জারির পরও সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি নেই, এমন ২১৯ কারখানার বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে ইউডি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিআইএফই মহাপরিদর্শক সামছুজ্জামান ভুইয়া বলেন, ইতিমধ্যে আমরা এ বিষয়ে ৩২ টি মতবিনিময় সভায় করেছি। কারখানা মালিকদের সতর্কও করেছি একাধিকবার। এরপরও অনেক কারখানায় সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি নেই। তাই আমরা দুই সংগঠনকে পৃথক চিঠির মাধ্যমে ২১৯ টি কারখানাকে ইউডি সেবা না দিতে বলেছি।
এই কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়বে প্রায় ১ লাখ শ্রমিক। শুধু তাই নয় চরম বিপাকে পড়বেন ২১৯ জন উদ্যোক্তাও। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা ধ্বসের পর কারখানাগুলো সংস্কারের দায়িত্বে নিয়োজিত অ্যাকর্ড-এল্যায়েন্স যে সংস্কার কার্যক্রমের কথা বলেছিল সেগুলো করতে প্রায় ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা দরকার। আমাদের ছোট কারখানাগুলোর তো এত সক্ষমতা নেই। ফলে সংস্কার কার্যক্রমও করে নি তারা। তখনই আমরা সরকারের কাছে দাবি করেছিলাম এসব কারখানার সংস্কারের সরকারের পক্ষ থেকে তহবিল তৈরি করার জন্য। তা করা হয়নি। ফলে শ্রমিকদের বেকারত্ব তো তৈরি হবেই সাথে সাথে ২১৯ জন উদ্যোক্তাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এতে করে কমবে উৎপাদন, রফতানি। যার ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।