মাত্র এক রাতের বৃষ্টি। তাতেই ভেসে গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। গতকালও খেলা মাঠে গড়ানো ছিল দারুণ শঙ্কায়। চট্টগ্রাম থেকে ছুটে এসেছেন কক্সবাজার স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর প্রবীণ হিংগানিকার। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মাঠে এসে প্রাণান্ত চেষ্টা করেন মাঠ প্রস্তুত করতে। অবশেষে ম্যাচ রেফারি দুই দফা মাঠ পরিদর্শন শেষে খেলা শুরুর সিদ্ধান্ত দেন বিকাল সোয়া ৩টায়। স্বস্তি ফিরে সালমা খাতুনদের মনে। যদিও ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে খেলা শুরুর নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট।কক্সবাজার শেখ কামাল স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে সফরকারী পাকিস্তান নারী দলের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন অধিনায়ক সালমা খাতুন। ম্যাচের পরিসর নেমে আসে ১৪ ওভারে।
গত তিন দিনে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এই সিরিজ ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন! পাকিস্তানের বিপক্ষে নারী দলের ম্যাচ কেন এমন একটি মাঠে? যেখানে নেই কোনো পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। শুধু কি তাই, দুই দলের ক্রিকেটারদের জন্য ড্রেসিং রুমটাও যে আন্তর্জাতিক মানের নয়। অন্যদিকে ছোট্ট দুটি রুমে ব্যবস্থা হয়েছে ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের। ম্যাচের ব্যবস্থাপনা দেখে আন্তর্জাতিক নয়, মনে হচ্ছিল নিচু সারির ঘরোয়া কোনো খেলা চলছে। অথচ এই সিরিজ মূলত নারী দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ঘিরে। যা চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চরম অবহেলায়।
৩০ ঘণ্টা আগে বৃষ্টি হয় কক্সবাজারে। তাতেই মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। গতকালও দ্বিতীয় ম্যাচে বিলম্বের কারণ ছিল স্টেডিয়ামের ভেজা আউট ফিল্ড। যে কারণে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাইছিলেন না ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ রাহুল। তিনি বলেন, ‘সামনেই ওদের (বাংলাদেশ) বিশ্বকাপের খেলা। তাই মাঠ খেলার উপযোগী না হলে ঝুঁকি নিতে চাই না। যদি কোনো ইনজুরি হয়। তাই একটু সময় বেশি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’ বিসিবির ভারতীয় কিউরেটর প্রবীণ হিংগানিকার চট্টগ্রামে যুব এশিয় কাপের ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত। সেখান থেকে ছুটে এসে গতকাল মাঠ খেলার জন্য প্রস্তুত করেন তিনি। তবে বৃষ্টি হলে ম্যাচ চালু রাখা কঠিন বলেই মনে করেন বিসিবির এ ভারতীয় কিউরেটর। মাঠের অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে এই মাঠে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও কাছেই সমুদ্র, মাঠের উচ্চতাও বেশি নয়। যে কারণে পানি নিষ্কাশন কঠিন। তবে আশা করি বৃষ্টি না হলে খেলা হতে কোনো সমস্যা নেই।’
চলতি বছর জুনেই শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ শিরোপা ছিনিয়ে আনে সালমা খাতুনের দল। বলতে গেলে ছেলে ক্রিকেটাররা যা পারেনি তাই করে দেখিয়েছে মেয়েরা। দেশের ক্রিকেটে প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা এসেছে তাদের হাত ধরেই। এরপরই বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেন সালমারা। তখন বিসিবি সভাপতি জানিয়েছিলেন নারী দলের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। আগামী মাসেই বাংলাদেশের মেয়েরা যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে। মূলত বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতেই পাকিস্তান নারী দলকে আমন্ত্রণ জানায় বিসিবি। এই সিরিজ শেষ করেই সালমারা উড়বে বিশ্বকাপের স্বপ্ন নিয়ে। কেন কক্সবাজারে সিরিজ আয়োজন? এ নিয়ে নারী দলের ভারতীয় কোচ অঞ্জু জৈন জানিয়েছিলেন মূলত ক্যারিবীয় কন্ডিশনের সঙ্গে মিল থাকায় কক্সবাজারে খেলা রাখা হয়েছে।
এখানে খেলেই অনেকটা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশনের সঙ্গে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতটা প্রস্তুতি নিতে পারবেন তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলেও এ নিয়ে কেন এমন উদাসীনতা? এমন প্রশ্নের সদুত্তর নেই নারী ক্রিকেট দলের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের। তিনি বলেন, ‘আমি কক্সবাজারে খেলা দেখতে যেতে পারিনি। দুই একদিনের মধ্যে যাবো। আসলে কেন এমন মাঠে আয়োজন তা নিয়ে বলতে পারবো না। বিসিবি যা ভালো মনে করেছে, করেছে। এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বর্তমানে দুটি মাঠ রয়েছে। একাডেমির মাঠের পাশেই রয়েছে মূল স্টেডিয়ামটি। আগামী ৮ই অক্টোবর থেকে সেখানে শুরু হবে জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) খেলা। এ কারণে সেখানে রাখা হয়নি নারী দলের খেলা। কক্সবাজার একাডেমি মাঠে খেলা নিয়ে দারুণ অসন্তোষ রয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেই।