চোরাচালানিদের কাছ থেকে আটক করেছিলেন ২৩৫টি সোনার বার। কিন্তু উদ্ধার দেখান মাত্র ৭০টি। বাকিগুলো তাঁরা মেরে দেন, যার ওজন ১৭ কেজির বেশি। এক সোর্সের সহায়তায় এই কাণ্ড করেন রাজধানীর রামপুরা থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুরুল ইসলাম, কনস্টেবল আকাশ চৌধুরী ও কনস্টেবল ওয়াহিদুল ইসলাম। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় চাঞ্চল্যকর ওই সোনা আত্মসাৎ ঘটনার সাড়ে চার বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার চারজনকে শাস্তি দিয়েছেন আদালত।
বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান খান পুলিশের ওই তিন সদস্যকে (বরখাস্ত) দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে পাঁচ বছর করে এবং সোর্স মাহফুজ আলম রনিকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। পাশাপাশি তিন পুলিশ সদস্যকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে অতিরিক্ত এক বছর কারাভোগের আদেশ দেন। সোর্স রনিকে একই অঙ্কের জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। কারাগারে থাকা এসআই মঞ্জুরুলকে রায় শোনার জন্য আদালতে হাজির করা হয়। রায় দেওয়ার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাঁকে হাজতে পাঠানো হয়। অন্যরা পলাতক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে মামলাটির আইনজীবী অ্যাডভোকেট রুহুল ইসলাম খান জানান, মামলার অন্য তিন আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক হওয়ায় তাঁদের পক্ষে এই রায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো আইনগত সুযোগ নেই। তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা ইস্যু করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলাটির বিচার চলাকালে চার্জশিটভুক্ত ৫৪ জনের মধ্যে ৩১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আসামি মঞ্জুরুলের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট জগন্নাথ সাহা।
২০১৪ সালের ১৩ মার্চ রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় রামপুরা থানা পুলিশ ২৩৫টি সোনার বারসহ একটি মাইক্রোবাস আটক করে। ওই সময় গাড়ি রেখে পালানোর সময় সমীর ও মুহিন নামে দুজনকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পর ৭০টি বার উদ্ধার দেখিয়ে সমীর ও মুহিনের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় একটি চোরাচালান মামলা করা হয়। থানা হেফাজতে নেওয়ার পর ওই দুই আসামি গাড়িতে ২৩৫টি সোনার বার ছিল বলে জানায়। পরে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমদের নির্দেশে মামলার তদন্ত করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আলাদা তিনটি দল নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও বগুড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশের তিন সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে বাকি সোনার বার উদ্ধার করে, যার ওজন ১৭ কেজি ৩৭৬ গ্রাম ৭০০ মিলিগ্রাম। পরে ৭ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলাটি করেন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক ফজলুল হক। তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত এবং রামপুরা থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে সদর দপ্তরে ক্লোজ করা হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, মঞ্জুরুলের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫৮টি সোনার বার পাওয়া যায়। বাসার ফ্রিজের ভেতর সেগুলো লুকিয়ে রাখা ছিল। পুলিশ কনস্টেবল ওয়াহিদুল ৬৩টি সোনার বার বাড়ির মেঝেতে পুঁতে রাখেন। সেগুলোও উদ্ধার করা হয়। আত্মসাৎ করা সোনার তখনকার বাজারমূল্য ছিল সাত কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অব্যাহতি দেওয়া হয় চার্জশিটভুক্ত আসামি মাইক্রোবাসচালক সজীব শিকদারকে।