ইন্টারনেট আছে বলে এমন অনেক অদ্ভুত কাজ আমরা করি, যা বাস্তবে করতে গেলে আসলে নিজের কাছেই নিজেকে পাগল মনে হবে। অনেকেই অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে রোগের লক্ষণগুলো গুগল করে বোঝার চেষ্টা করেন তার কী হয়েছে। কেউ আবার বাস্তবে নিপাট ভালোমানুষ হলেও ইন্টারনেটে অপরিচিত মানুষদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেন। কেউ আবার প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকা অনলাইনে কী করছেন তার ওপর গোয়েন্দাগিরি করেন!
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের বয়স প্রায় তিন দশক হয়ে গেছে। এ সময়ে আমাদের আচরণ ও চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ইন্টারনেট বেশিরভাগ মানুষের জন্যই ভালো একটা জায়গা। কিন্তু অনেকের জন্য ইন্টারনেট হতে পারে খারাপ আচরণের অভয়ারণ্য।
‘প্রব্লেমেটিক ইউজ অব ইন্টারনেট’ বা ইন্টারনেটে খারাপ আচরণের বিষয়টা ভালো করে বুঝতে ইউরোপের গবেষকরা একটি রিসার্চ নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন। মূলত ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরণের খারাপ আচরণ, এই আচরণের প্রভাব, কারণ এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা খুঁজে বের করতে চান তারা।
এই নেটওয়ার্কের প্রধান এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারের অধ্যাপক নাওমি ফাইনবার্গ বলেন, ‘ইন্টারনেটের নেতিবাচক ব্যবহার একটি গুরুতর সমস্যা। ইদানিং প্রায় সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করে, কিন্তু এমন খারাপ আচরণের ওপর খুব বেশি তথ্য নেই।’
রিসার্চ নেটওয়ার্কটিতে বর্তমানে ইউরোপের ৩৮টি দেশের ১২৩ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন এবং ইউরোপিয়ান কোঅপারেশন ইন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে তাদেরকে ৫ লাখ ২০ হাজার ইউরো অনুদান দেওয়া হয়েছে। ফাইনবার্গ জানান, শুধু সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ যেমন নিউরোসায়েন্টিস্ট, জেনেটিসিস্ট, সকল বয়সের মানুষের জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট, পলিসি মেকার এবং ইন্টারনেটের খারাপ আচরণের ভুক্তভোগী- সবারই প্রয়োজন এই নেটওয়ার্কে।
এই নেটওয়ার্কে মূলত নয়টি এলাকায় গবেষণা করা হবে। এসব এলাকার মাঝে একটি হলো অবসেসিভ গেমিং, যা এই বছরের শুরুর দিকে রোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রের মাঝে আছে পর্ন দেখা, এবং সাইবারকন্ড্রিয়া। সাইবারকন্ড্রিয়া তাকেই বলে যখন একজন সুস্থ মানুষ ইন্টারনেটে রোগের লক্ষণ ঘাঁটতে ঘাঁটতে মনে করেন তিনি মৃত্যুর মুখে রয়েছেন। এসব আচরণের পেছনে ব্যক্তিত্ব, সামাজিক অবস্থা এবং বংশগতির প্রভাব আছে কিনা, সেটাও গবেষণায় থাকবে।
তবে ইন্টারনেটে এত খারাপ আচরণের পরেও গবেষকরা মনে করেন, বেশিরভাগ মানুষের জন্যই ইন্টারনেট তেমন বিপজ্জনক কিছু নয়।
সূত্র: আইএফএলসায়েন্স