ডিমের উৎপাদন গত এক দশকে বেড়েছে তিনগুণ। দেশে ডিমের বাজারের আকার এখন সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। দেশে ডিমের চাহিদা দিন দিন বাড়লেও ‘নানা প্রতিকূলতার কারণে’ সাম্প্রতিক সময়ে উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে।
বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।
বিপিআইসিসির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, চাল, চিনি, দুধ, আটাসহ অন্যান্য খাবারের মত ডিমেরও বিজ্ঞাপন প্রয়োজন। কিন্তু ডিম বিক্রি থেকে যে লাভ পাওয়া যায় তা দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তাই এ কাজে তথ্য মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে।
দেশে ডিম খাওয়ার হার কী পরিমাণ বেড়েছে- সেই তথ্য এ আলোচনায় তুলে ধরেন ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ শাখার সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ।
হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশে গরুর মাংস খাওয়ার পরিমাণ যেখানে ১০ শতাংশ, মাছ খাওয়ার পরিমাণ যেখানে ২৬ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে ডিম খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। এই সময়ে ডিমের মাথাপিছু ‘কনজাম্পশন’ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রাম।
তবে নানা কারণে খামারিদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে দাবি করে খালেদ বলেন, গত এক বছরে ‘ডিমের দাম না পেয়ে’ অনেকেই খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। বার্ড ফ্লুর সংক্রমণেও ডিমের উৎপাদন কমে গেছে।
বিপিআইসিসির হিসাবে, দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে প্রতিদিন গড়ে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডিম উৎপাদন হয়। আর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, গৃহপালিত মুরগি, হাঁস ও কোয়েল পাখির ডিম হিসাবে ধরলে দৈনিক গড় উৎপাদন ৪ কোটি ৭১ লাখের বেশি হবে।
২০০৭-০৮ অর্থবছরে যেখানে ৫৬৫ কোটি ডিম উৎপাদন হয়েছিল, সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ১৫৫২ কোটি হয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬৬৫ কোটি। এর মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে ডিমের মোট ৪৩৩ দশমিক ৫৩ কোটি ডিম উৎপাদন হয়েছে।
প্রতিটি ডিমের গড় দাম ৭ টাকা ধরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১০ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার ডিম বাণিজ্য হয়েছে। এই হিসাবে চলতি অর্থবছরে ডিম নিয়ে প্রায় ১১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করছে বিপিআইসিসি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক আলোচনা সভায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ যে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হলে ডিমের মাথাপিছু কনজাম্পশন দ্বিগুণ করতে হবে। প্রতিটি মানুষকে দৈনিক অন্তত একটি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস ও আর্থিক সক্ষমতায় উন্নীত করতে হবে।
পোল্ট্রি খামারিদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিদের জন্য এক অংকের সুদে ক্ষুদ্র ঋণ এবং কৃষির জন্য প্রযোজ্য দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ভাবছে সরকার।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. শওকত আলী এবং বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন নাহার নাহিদ।
ডাক্তার নাহিদ বলেন, ডিম নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, ডিম হার্টের জন্য উপকারী, ডিম খেয়ে ওজন কমানো যায়, ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এবং হাড় মজবুত করতে ডিম অত্যন্ত কার্যকর।
ডায়াবেটিসের রোগিরাও ডিম খেতে পারবেন। অনেকে ডিমের কুসুম না খেয়ে সাদা অংশ খান এতে তারা ডিমের পরিপূর্ণ পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।