শাহীন চৌধুরী : অবশেষে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানিতে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয় বিইআরসি। আর এলএনজি গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হওয়ায় এই খাতে এবছর ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। অবশ্য আগামী বছর থেকে এই ভর্তুকির পরিমান আরও বাড়বে। গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে এই টাকা ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বিইআরসি সদস্য আব্দুল আজিজ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এলএনজি আমদানিতে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। যা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। এই পরিমাণ ভর্তুকি দিলে এলএনজি আমাদনিতে আর কোনও সমস্যা হবে না বলেও জানান কমিশনের এই সদস্য। বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, ১৭ মার্চ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) কমিশনে সঞ্চালন ট্যারিফ বাড়ানোর আবেদন করে। এরপর ২০ মার্চ গ্যাস বিতরণ তিতাস, বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল ও কর্ণফুলী এবং ২১ মার্চ জালালাবাদ ও সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি পৃথকভাবে তাদের বিতরণ চার্জসহ ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর আবেদন করে। তিনি আরও বলেন, কমিশন আবেদনগুলো বিবেচনা করে জুনে গণশুনানি করে। গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরও সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিইআরসি রেগুলেটরি আইন ২০০৩ এর ধারা ২২ (খ) এবং ৩৪’-এ দেওয়া ক্ষমতা বলে কমিশন ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যমান মূল্যহার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এসময় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জারি করা ২৬ সেপ্টেম্বরের এসআরও-এর মাধ্যমে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এলএনজি আমাদনির শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ওই বিভাগের জারি করা ৩ অক্টোবরের আলাদা দুটি এসআরও-এর মধ্যেমে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক এবং আমদানি-পর্যায়ে অগ্রীম কর ও অগ্রীম ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান গ্যাস মূল্যহার বণ্টন, বিবরণী সংশোধন করে কমিশন আদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কমিশন নিরাপত্তা জামানত, বিল পরিশোধ, বিল পৌঁছানো বিষয়ে আগের নিয়মের পরিবর্তন করেছে। বিতরণ সিস্টেম লস নিরূপনের প্রচলতি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া গ্যাস সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থায় আরও কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ ১৮ সেপ্টম্বর থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত সপ্তাহে বিইআরসি গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত চায়। গত ৭ অক্টোবর বিইআরসি চেয়ারম্যান এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা চায়। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়েও যান তিনি। সিদ্ধান্ত ছিল বিকেলে ফিরে এসে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে কোনও ধরনের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করার বিষয়ে নির্দেশনা দেন। ফলে ওই দিনের সংবাদ সম্মেলন বাতিল করে বিইআরসি।
নির্বাচনের ঠিক আগে এভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় সরকার বিইআরসিকে দাম বৃদ্ধির বদলে কত টাকা ভর্তুকি দিলে এলএনজি আমদানি স্বাভাবিক থাকবে তা বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশন গত সপ্তাহজুড়ে ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণ করে। এ সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের অন্য সদস্য রহমান মুরশেদ, মিজানুর রহমান ও মাহমুদ উল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
কমিশন এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, নিরাপত্তা জামানত হিসেবে তিন মাসের পরিবর্তে ২ মাসের, ছয় মাসের পরিবর্তে ৪ মাসের বিলের সবপরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটার গ্রাহককে আর নিরাপত্তা জামানত দিতে হবে না। গ্যাসের বিলের কাগজে গ্যাসের মূল্যহার ঘনমিটারে ঘণ্টা প্রতি ও মাসিক অনুমোদিত লোড, চালনা পদ্ধতি, (দৈনিক কর্মঘণ্টা ও মাসিক কার্য দিবস), ডায়ভারসিটি ফ্যাক্টর ও সরবরাহ চাপ উল্লেখ করতে হবে। সব ধরনের গ্যাস ব্যবহারকারী সরবরাহ মাসের পরবর্তী মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত বিলম্ব মাশুল ছাড়া বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এই সময়সীমার কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গ্রাহকের কাছে বিতরণকারী কোম্পানিকে বিল পৌঁছাতে হবে। ক্যাপ্টিভ পাওয়ার ও শিল্প গ্রাহকের কো-জেনারেশন স্কিম অব্যাহতভাবে তিন মাস চালু থাকলে পরের তিন মাসের মধ্যে ওই গ্রাহকের তিন মাসের মোট বিলের (সারচার্জ বা বিলম্ব মাশুল ছাড়া) ওপর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ছাড় (রিবেট) দেওয়া হবে।