মনিরুজ্জামান মনির ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলা নিয়ে গঠিত ২৫ কুড়িগ্রাম-১ সংসদীয় আসন। আসনটিতে নেই তেমন নির্বাচনী উত্তাপ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার, পোষ্টার ও ফেষ্টুনের মাধ্যমে দোয়া কামনা ও সমর্থন বাড়াতে চেষ্ঠা করছেন। চায়ের দোকানে, আড্ডায় কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি এবং জাপার রয়েছে একক প্রার্থী। কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী- ভূরুঙ্গামারী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির একেএম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে পরপর ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থেকে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অপরদিকে আওয়ামী লীগের রয়েছে একাধিক প্রার্থী। দশম সংসদ নির্বাচনে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়াম্যান শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। জাপার সাথে জোটের কারনে তাকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন নাগেশ^রী উপজেলার সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন সওদাগর। জোটের কারনে তাকেও আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। দশম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন তিনি। দুই উপজেলাতেই জনপ্রিয় এই নেতা এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা বেশ লম্বা। এ তালিকায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান মন্ডল, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুন্নবী চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক নেতা ও আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি, কৃষক নেতা মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বীরবল, নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক প্রধান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম মাজু প্রমুখ। বিএনপির একক প্রার্থী হিসাবে আছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব সাইফুর রহমান রানা। তিনি বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে পরাজিত হন। এছাড়া ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাষ্টার জাকের পার্টির মনোনয়নে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হাই মাষ্টার ছিলেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি। জেপি’র (মঞ্জু) প্রার্থী হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট রশিদ আহমেদ জনসমর্থন বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন জোটগত ভাবে হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে হতাশা। তবে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে দুই উপজেলাতেই ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম কমিটি গঠনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রেখেছে। নাগেশ^রী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজমুল হুদা লাল ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ¦ ইসলামুল হক জানান, ইতোমধ্যে নাগেশ^রী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো, দলীয় এবং জোটগত ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। দলীয় প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত। জোটবদ্ধ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না থাকার প্রশ্নে তারা জানান, দলের হাই কমান্ডের নির্দেশ মোতাবেক নেতাকর্মীরা কাজ করবে। বিভিন্ন মামলা, হামলা ও বাঁধার কারনে এ আসনে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ঘরোয়া কার্যক্রম ছাড়া প্রকাশ্যে বিএনপির তেমন কার্যক্রম দেখা না গেলেও নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম রসুল রাজা ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী গোলাম মোস্তফা জানান, নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারীর জনগন পরিবর্তন চায়, এই আসনের বিগত নির্বাচনগুলোতে বিএনপি সামান্য ব্যবধানে হেরে গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসবে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হলে এই আসনটিতে বিএনপির শতভাগ জয়ের সম্ভবনা রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টি তাদের মাঠ গোছানো শুরু করেছে। দুই উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা চলছে। নাগেশ্বরী উপজেলা জাপা সদস্য সচিব আ.ম.প আনিসুর রহমান ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা জাপা সাব-কমিটির সম্পাদক রাশেদুন্নবী লালু জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার জাতীয় পার্টি বেশ সুসংগঠিত। নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি সাংগঠনিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। আসন্ন নির্বাচন জাতীয় পার্টি জোটগত ভাবে নির্বাচন করলেও জয় লাভ করবে পক্ষান্তরে একক ভাবে করলেও জয় লাভ করবে।
আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ গ্রহণ করে এবং আওয়ামী লীগের সাথে জাপার জোট না থাকে তাহলে এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হবার সম্ভাবনা রয়েছে।