চলচ্চিত্র শিল্পের মাদার অর্গানাইজেশন বলা হয় প্রযোজক পরিবেশক সমিতিকে। অথচ কয়েক বছর কেটে গেলেও সেই সমিতির নির্বাচন নেই। একটা সময় চলচ্চিত্র করতে গিয়ে নির্মাতা, শিল্পী কোনো সমস্যায় পড়লে প্রযোজক সমিতির নেতারা সেই সমস্যার সমাধান করেছেন। সেটা এখন আর দেখা যায় না। প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচন দীর্ঘ সময় না হওয়ার কারণে অনেক প্রযোজক ধীরে ধীরে সিনেমা প্রযোজনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। অন্যান্য সংগঠনের নির্বাচন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হলেও বারবার নানা কারণে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নির্বাচন। বর্তমানে এই সংগঠন চালাচ্ছেন একজন সরকারি প্রশাসক। দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই সংগঠন।প্রযোজক পরিবেশক সমিতির অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১৩ সালে সবশেষ এ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। এরপর নানা জটিলতার কারণে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। এক বছর এক মাস পর আবারো আসেন নতুন প্রশাসক নাজমুল আবেদিন। বর্তমানে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন রথীন্দ্রনাথ রায়। মূলত নেতাদের মধ্যে নির্বাচনের আগে নানা বিষয় নিয়ে অমিল এবং দ্বন্দ্ব থাকার কারণে একজন সরকারি প্রশাসকের হাতে দায়িত্ব চলে যায়। তবে চলচ্চিত্রের এই দুঃসময় কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রযোজকরা আবারো এক হচ্ছেন। খুব দ্রুত প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নির্বাচন চান তারা। সকলে মিলে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসক বরাবর চলতি সপ্তাহে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং এফবিসিসিআই বরাবর। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চলচ্চিত্র প্রযোজক শামসুল আলম। তিনি গতকাল বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে আগের মামলার যে ঝামেলা ছিল তা সাত মাস আগেই শেষ হয়েছে। মামলার রায় হওয়ার পরও নির্বাচন না হওয়ার কারণে আমরা এখন সকলে এক হয়ে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নির্বাচনটা চাইছি। তাই একটি চিঠিতে সকল প্রযোজকের স্বাক্ষরসহ প্রশাসক বরাবর চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ চিঠির বিষয়ে আমি ছাড়াও প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলু, খোরশেদ আলম খসরু, চিত্রনায়ক আলমগীর, মুশফিকুর রহমান গুলজার, মেহেদী সিদ্দিকী মনির, এ জে রানা, ইকবাল, আতিকুর রহমান লিটন, জায়েদ খান, অমিত হাসানসহ মোট ১০০ জন প্রযোজক সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলু এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনটা হওয়া খুব জরুরি। কারণ, প্রযোজক সমিতি যে উচ্চতায় ছিল তা এখন আর নেই। প্রযোজক ও পরিচালক এ জে রানা বলেন, আমি সকল প্রযোজকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা নির্বাচনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। এরইমধ্যে ৭০ জনের মতো প্রযোজক সংশ্লিষ্ট চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। হার্টবিট প্রোডাকশনের প্রযোজক তাপসী ঠাকুর বলেন, প্রযোজক সমিতির নির্বাচন হওয়াটা এখন সময়ের দাবি। চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারেরও সহযোগিতা লাগবে। আর প্রযোজক হিসেবে আশা করছি, শুধু প্রযোজক সমিতির নির্বাচন না, চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকল সমিতিকে একযোগে আন্তরিকতার সঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্প রক্ষার জন্য কাজ করতে হবে।