সিকান্দার রাজার বলে ব্যাট ছুঁয়ে ছুটলেন মুশফিকুর রহীম। পপিং ক্রিজ পেরিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে লাফিয়ে উঠলেন আকাশে। এরপর দু’হাতের আঙুল দিয়ে মুখের সামনে আঁকলেন হৃদয়ের চিহ্ন। এরপর তা চুমুতে উড়িয়ে পাঠালেন গ্যালারিতে বসা স্ত্রীকে। হ্যাঁ, তার হৃদয় নিংড়ানোর এই সেঞ্চুরি উপহার দিলেন স্ত্রী জান্নাতুল কাফায়েত মণ্ডিকে। অথচ শ্রীলঙ্কার গলে তার ব্যাটে যখন প্রথম ডবল দেখেছিল বাংলাদেশ তখন তার এমন ক্ষেপাটে উদযাপন ছিল না! সেদিন আসেননি সংবাদ সম্মেলনেও, তাহলে এবার কেন এমন লাগাম ছাড়া আবেগ! কোনো রাখঢাক না রেখে জানিয়ে দিলেন, ‘নিজের ওপর অনেক বিশ্বাস ছিল। সেদিক থেকে অবশ্যই অনেক ভালো লাগছে। কারণ ডবল সেঞ্চুরি সহজ নয়।আর মিরপুরের উইকেট, আপনারা জানেন আরো কঠিন। আর সেলিব্রেসন! যদি বলেন, এই ইনিংসটি আমার স্ত্রীকে উৎসর্গ করেছি। ইনিংসটা অনেক স্পেশাল ছিল ও আমাকে অনেক অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। কালকেও (টেস্টের প্রথমদিন শেষে) আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছে। আর ২০১০ সালে আমার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি, বিশেষ করে এই মাঠে আমার প্রথম সেঞ্চুরি। এটা আমার ক্ষেত্রে মাইলফলক ছিল। চেষ্টা থাকবে এটার ধারবাহিকতা ধরে রাখার।’
টেস্ট অভিষেকের ১৩ বছর কেটে গেলেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান ডবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি। তবে ৫ বছর আগে মুশফিকের সেই আক্ষেপ মেটে। গলের সেটি নাকি মিরপুরের এটি কোনটি এগিয়ে রাখবেন মুশফিক! তবে জয় না পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি যে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। মুশফিক বলেন, ‘এগিয়ে রাখার সময় আসেনি। যদি এই ম্যাচটা জিততে পারি তাহলে এটাই এগিয়ে থাকবে। কারণ আমরা গলে টেস্ট জয় করিনি, ড্র করেছি। ওটাও কঠিন ছিল। এটাতো আরো কঠিন।’ গেল বছর মুশফিকুর রহীম হারিয়েছেন টেস্ট নেতৃত্ব। এমনকি তার উইকেট কিপিং নিয়েও ছিল বিস্তর সমালোচনা। তার হাত থেকে প্রিয় গ্লাভস খুলে তুলে দেয়া হয় লিটন কুমার দাসের হাতে। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে ফের তা ফিরে পান। সেই সঙ্গে প্রমাণ করেন উইকেটকিপিং তার জন্য কোনো চাপ নয় বরং এগিয়ে যাওয়ার বড় অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, ‘কিপিং আমাকে অনেক বেশি সাহায্য করে। এমন নয় কিপিং করলে আমি প্রতি ম্যাচেই একশ’ বা দুইশ’ করবো। কিন্তু কিপিংটা একটা প্রসেস এবং আমি অনেক বেশি বিশ্বাসী। আমার মনে হয় এটা অনেক হেল্প করে। এখন টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা চাইবে সেটা তো তাদের ব্যাপার। সেভাবে অবদান রাখতে চেষ্টা করি। অনেক সময় কিপিং করে বা ব্যাটিং করে ওয়ার্কলোড বেশি হয়ে যায়। কিন্তু আমার জন্য এটা চ্যালেঞ্জ এবং আমি চ্যালেঞ্জ উপভোগ করি।’