২০০৯। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ইনজুরির কারণে ক্যারিবীয় সফরে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বনে যান সাকিব আল হাসান। নেতৃত্ব যেন সাপেবর হলো। তার হাত ধরেই বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্টই নয়, এলো ২-০তে সিরিজ জয়ও। এরই মাঝে পেরিয়ে গেছে ৯ বছর। আবারও সাকিবকে ডাকছে ‘সেই’ ইতিহাস। আজ মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। চট্টগ্রাম টেস্টে জয় নিয়ে সিরিজে টাইগাররা এগিয়ে আছে ১-০তে।তাই ঢাকা টেস্টে জিততে পারলেই হবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। তবে এবারের হাতছানি দেশের মাটিতে। তাই ম্যাচটি অধিনায়কের জন্য স্পেশাল ও চ্যালেঞ্জিং। ম্যাচের আগের দিন নিজের লক্ষ্য ও দল নিয়ে সাকিব তুলে ধরেছেন নানা পরিকল্পনার কথা। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবে?
সাকিব: অবশ্যই জেতার জন্য খেলবো আমরা। যদি ওইরকম কোনো সিচুয়েশন আসে যেখানে হয়তো ড্র করার সম্ভাবনা আছে, তখন সেটা চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে ফার্স্ট টার্গেট অবশ্যই জেতার জন্য খেলা।
প্রশ্ন: ২০০৯ ও ২০১৮’র মধ্যে পার্থক্য?
সাকিব: সেবার ওরা দুর্বল হলেও আমরাও খুব ভালো দল ছিলাম না। এবারও সুযোগ আছে, কিন্তু সেটি কাজে লাগাতে অনেক হার্ডওয়ার্ক করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই উইন্ডিজ দল আরও ভালো করার জন্য এক্সাইটেড থাকবে। ওরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে যেন জিততে পারে। আমাদের জিততে হলে ওদের থেকে বেটার পারফর্ম করতে হবে। চিটাগংয়ে যে পারফরমেন্স করেছি তারচেয়েও ভালো পারফর্ম করতে হবে এখানে জিততে হলে। আমাদের নিজেদের ওপরেও নিজেদের একটা চ্যালেঞ্জ আছে।
প্রশ্ন: সিরিজ জয়ের বাড়তি চাপ আছে কি-না?
সাকিব: না আমার তো মনে হয় না অতিরিক্ত কোনো চাপ আছে। গত দুইদিন ড্রেসিং রুমে বসে যা দেখেছি, সবাই খুব রিল্যাক্স মুডে আছে। খুবই ভালো সিচুয়েশনে আছে, একটা ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে টিমের যতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকা দরকার ঠিক ততটুকুই আমাদের আছে। আমি মনে করি ড্রেসিং রুমের পরিবেশ খুবই ভালো অবস্থায় আছে।
প্রশ্ন: এই টেস্ট কতটা স্পেশাল?
সাকিব: বাংলাদেশের জন্য স্পেশাল হবে যদি আমরা মনে করি ২-০তে জিততে পারি। আমরা চাই ২-০ তে জিততে। তার জন্য যা কিছু করা দরকার, যেভাবে প্রস্তুতি নেয়া দরকার আমরা সেভাবেই নিচ্ছি। যদি সেটা কোনোভাবে না হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য যেন ১-০তে সিরিজ জিতি, কারণ আল্টিমেট লক্ষ্য সিরিজ জেতা। কিন্তু আমরা ডিফেন্সিভ ওয়েতে সিরিজটা জিততে চাই না। আমরা চাই পজিটিভ মাইন্ড নিয়ে সিরিজটা জিতি এবং ২-০তে জিতি।
প্রশ্ন: এই উইকেটে পেসারদের সুবিধা কতটা থাকবে?
সাকিব: বলা যায় না, ঢাকার উইকেট সকাল বেলা একটু হলেও পেস বোলারদের সবসময় হেল্প করে। স্পেশালি এমন ওয়েদারে, যখন একটু কুয়াশা পড়ে, একটু ঠাণ্ডা ভাব থাকে। ঢাকার উইকেটটাতে সবসময় পেস বোলারদের একটু হেল্প থাকে। সেটা আমাদের বিবেচনায় আছে।
প্রশ্ন: সাদমানকে নিয়ে আশা?
সাকিব: সাদমান টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এক্সাইটিং প্রসপেক্ট। ওর খেলার ধরন আমি যতটুক দেখেছি এবং শুনেছি, টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে খুব মানানসই। ও যদি সুযোগ পায় আমি আশা করবো সে যেন দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রশ্ন: আপনার ফিটনেস?
সাকিব: ম্যাচ খেলার মাধ্যমে খুব একটা ফিট হওয়ার সুযোগ থাকে না। বডি বরং টায়ার্ড হতে থাকে। তবে তিন দিনে টেস্ট শেষ হওয়ায় রিকভারির টাইম ছিল। আরেকটু ফিটনেসের কাজ করার টাইম ছিল। আমি খুবই সিউর যে আগের টেস্টের চেয়ে ফিজিক্যালি বেটার অবস্থায় থাকবো আমি।
প্রশ্ন: চার স্পিনার নিয়ে খেলাটা কতটা এক্সাইটিং?
সাকিব: অবশ্যই এক্সাইটিং, একই সাথে আমার কাছে মনে হয় একটু চ্যালেঞ্জিংও। কারণ স্পিনাররাও সব সময় চায় বড় স্পেল করার জন্য। যেটা আমি তাইজুল ছাড়া আর কাউকে দিয়ে করাতে পারিনি। ওটা একটা চ্যালেঞ্জিং জায়গা। কিন্তু একদিক থেকে চ্যালেঞ্জিং হলেও আরেক দিক থেকে অনেক এক্সাইটিং, কারণ সবাই চেষ্টা করছে দলের প্রয়োজনে সবাই একটা উইকেট নিতে বা ভালো বোলিং করার। আর দেখতে আমার কাছে ভালো লেগেছে সব সময় দুইটা এন্ড থেকে অ্যাটাক করতে পেরেছি, যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক ভালো একটা দিক।
প্রশ্ন: ওপেনিং জুটিতে নতুন মুখ?
সাকিব: শুরুটা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওপেনারদের ওপর ব্যাটিং হোক বা বোলিং হোক, বোলিং হলে দায়িত্ব থাকবে একটা ব্রেকথ্রু দেয়ার। আর ব্যাটিং হলে চাই বলটা যেন পুরনো করে দিয়ে আসতে পারে বা একটা ভালো জুটি গড়ে দিয়ে আসতে পারে। তাহলে খেলাটা অনেক সহজ হয়। ওই জায়গাতে আমরা বেশি সফল হইনি। বোলিংয়ে হয়েছি, ব্যাটিংয়ে হইনি। এ কারণে অনেকগুলো পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, চেঞ্জ হতে থাকলে একটা সময় এসে ওরকম কাউকে আমরা পাবো, যাদেরকে মনে হবে, এদেরকে একটা জায়গায় রেখে খেলানো সম্ভব হবে। ওই ভরসার জায়গাটা তৈরি করা খুব জরুরি। আমি আশা করবো আমরা ও রকম কাউকে যেন পেয়ে যাই যেটাতে আমাদের ভিতটা গড়ে উঠবে।