জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানাধীন হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে গতকাল তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করা আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান এই আলোকচিত্রী দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে ২৮শে নভেম্বর তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তিনি ওই হোটেলে উঠেন। আর শনিবার সকালে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ তার মরদেহ হোটেল থেকে উদ্ধার করেছে। তার মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকের ধারণা, তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন; আবার কেউ কেউ বলছেন, তার মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে।তবে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু স্ট্রোকের কারণে হয়েছে।
পুলিশ বলছে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আনোয়ার হোসেন হোটেলে আসেন। গতকাল সকালে যে প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি এসেছেন তার আয়োজকরা তাকে মোবাইলে ফোন করেন একাধিকবার। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে আয়োজকদের মধ্যে থেকে কয়েকজন সদস্য হোটেলে আসেন। তিনি যে কক্ষে ছিলেন সে কক্ষের বাইরে থেকে তার দরজায় ধাক্কা দিয়ে তাকে ডাকা হয়। কিন্তু তিনি ভেতর থেকে কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না। এভাবে আধা ঘণ্টা দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকির পর সাড়া না দেয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ শেরেবাংলা নগর থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তার মরদেহ দেখতে পায়।
এদিকে আনোয়ার হোসেনের ময়নাতদন্ত গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা হয়েছে। সেখানে নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ তার পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে। পাঁচবারের জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই আলোকচিত্রীর মৃত্যু কী কারণে হয়েছে এমন প্রশ্নে শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গনেশ গোপাল বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে। আনোয়ার হোসেনের স্বজনদের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে কথা বলছেন বলে ওসি জানান।
আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৬ই অক্টোবর পুরান ঢাকার আগা নবাব দেউড়িতে। বেড়ার ঘরের মাঝখান দিয়ে একজন চলার উপযোগী সরু পথ গিয়েছে, এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা তার। বাবা কাজ করতেন সিনেমা অফিসে। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকলেও পড়ালেখার প্রতি আনোয়ার হোসেনের এতটাই টান ছিল, প্রতিদিন ভোর ছয়টায় পড়তে বসতেন। সকাল হলে পাড়ার ছেলেরা হাজির হতো।
তাদের সঙ্গে বস্তা নিয়ে হাটে যেতেন। সেখানে গাছ চেরা ছোট টুকরো সংগ্রহ করতেন তিনি। সেগুলো বস্তা প্রতি আট-নয় আনায় বিক্রি হতো। সেখান থেকে ফিরে বাজার করতেন, তারপর যেতেন স্কুলে। ১৯৬৭ সালে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে কেনা প্রথম ক্যামেরা দিয়ে তার আলোকচিত্রী জীবনের শুরু। প্রথম সাত বছর ধার করা ক্যামেরা আর চলচ্চিত্রের ধার করা ফিল্ম দিয়ে তিনি কাজ চালান। ওই ফিল্মগুলো ছিল সাদা-কালো। তিনি ৩৬ টাকা ব্যয়ে রঙিন ছবি তোলা শুরু করেন ১৯৬৯ সালে। পরবর্তী ২০ বছর আলোকচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। তিনি সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্ছিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এই পাঁচ ছবি হলো- ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘পুরস্কার’, ‘অন্য জীবন’ ও ‘লালসালু’।