মানবসেবায় উদ্বুদ্ধকরণের এক অনন্য প্রয়াস দেখা গেল জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে। প্রতি ইত্যাদি’তেই এমনটা দেখা যায়। তবে এবারের প্রয়াসটির আবেদন যেন অন্যরকম আবেগে ভরপুর। ২০১০ সালে ইত্যাদি’র একটি পর্বে দেখানো হয়েছিল দুই তরুণ আরিফ ও নাজমুল কীভাবে অসহায় ও দরিদ্র অসুস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা বিভিন্ন দোকান ও শপিং মল থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন। সেই অর্থ স্বচ্ছতার সঙ্গে পৌঁছে দিতেন শিশুর পরিবার কিংবা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে। এবারের পর্বে দেখানো হয় তাদের সেই মহৎ কাজের ফলোআপ। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে দুই তরুণ আরিফ ও নাজমুল তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের চিকিৎসায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই সময়ে তারা ক্যানসারে আক্রান্ত ১০৬ জন ও হৃদরোগে আক্রান্ত ৪৩ জন শিশুসহ মোট ২৪০ জন শিশুকে চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসাবাবদ এতে ব্যয় হয়েছে ৯৭ লাখেরও বেশি। এই অর্থ সংগ্রহ করেছেন আরিফ, নাজমুল ও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা। এর বাইরে তারা একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য, যার নাম ‘টেন টাকা স্কুল’। সব মিলিয়ে মানবতার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো গেল শুক্রবার বিটিভিতে প্রচারিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত এ পর্বটি। এ ছাড়াও বরাবরের মতো এবারের পর্বেও চোখে পড়েছে বিনোদন ও তথ্য প্রদানের অপূর্ব সমন্বয়। এবারের পর্বটি ধারণ করা হয় প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের অপূর্ব লীলাভূমি সুনামগঞ্জ জেলার দুর্গম অঞ্চল
সীমান্ত ঘেঁষা তাহেরপুর উপজেলার টেকেরঘাটে। শুরুতেই সুনামগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত-দর্শনীয় ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর উপর একটি দারুণ তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন দেখানো হয়। এরপর একটি গানের সঙ্গে অপূর্ব নৃত্য পরিবেশন করেন টেকেরঘাটেরই স্থানীয় নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। দেওয়ান হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, দুর্বিন শাহ এবং শাহ আবদুল করিমসহ আরো বহু লোকসাধকদের অমর সংগীতে মুখরিত সুনামগঞ্জ। তাদের উপরও একটি তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখানো হয়। ঢাকার আশুলিয়ার মাইনুল মাজেদিনের ঘড়ি সংগ্রহের উপর দেখানো হয় একটি ভিন্নধর্মী ও তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন, যা ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম দিক। জার্মানি প্রবাসী শৌখিন দূরপাল্লার দৌড়বিদ বাংলাদেশের নবাবগঞ্জের শিব শংকর পালের উপরও একটি অনুপ্রেরণামূলক প্রতিবেদন দেখানো হয়। সুনামগঞ্জের মরমী সাধক দেওয়ান হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, দুর্বিন শাহ ও শাহ্ আবদুল করিমের লেখা চারটি গানের অংশ বিশেষের সমন্বয়ে ইত্যাদিতে এবার সংগীত পরিবেশন করেন সিলেটেরই সন্তান শিল্পী শুভ্রদেব, সেলিম চৌধুরী ও সহশিল্পীবৃন্দ, যা ছিল বেশ উপভোগ্য। প্রতিবেদনে দেখানো হয় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার উপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন। অনুষ্ঠানে আরো দেখা গেছে বরাবরের মতো নিয়মিত দর্শক পর্ব, বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ন নাট্যাংশ। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। আর স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড।