নিজেদের সমকামি দাবি করে অস্ট্রেলিয়ায় নিরাপত্তা চাওয়া দুই বাংলাদেশী পুরুষকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের যৌন জীবন নিয়ে আক্রমাণাত্মক ও অরুচিকর প্রশ্ন করা হয়েছে। এমন প্রশ্নকে অনধিকার ও প্রয়োজনীয় বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এমন আচরণ অনভিপ্রেত ও হতাশাজনক। অস্ট্রেলিয়ার অনলাইন বাজফিড নিউজে এ কথা বলা হয়েছে।
নিজেদের সমকামী বলে দাবি করা ওই দুই বাংলাদেশীকে ‘অ্যাপ্লিকেন্ট এ’ এবং ‘অ্যাপ্লিকেন্ট বি’ নামে পরিচয় দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের নিরাপত্তা চাওয়ার আবেদন নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকারের যে অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তাতে উঠে আসে অরুচিকর প্রশ্ন। তাদের কাছে ওই কর্মকর্তা জানতে চান তারা একে অন্যের শুক্র গিলেছেন কিনা। ফ্রিডম অব ইনফরমেশন (এফওআই) ব্যবস্থায় পাওয়া ডকুমেন্টে পাওয়া গেছে এমন অনেক অমার্জিত প্রশ্ন। ২০১২ সালে সিডনিতে তখনকার ডিপার্টমেন্ট অব ইমিগ্রেশন অ্যান্ড সিটিজেনশিপে তাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছিল।পরে ওই দুই বাংলাদেশীর ‘প্রটেকশন ভিসা’ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। আবেদনকারী ‘এ’ এবং ‘বি’কে তাদের যৌনজীবন সম্পর্কে যে প্রশ্ন করা হয়েছিল পরে তাকে অনধিকার ও অপ্রয়োজনীয় বলে সমালোচনা করেছে রিফিউজি রিভিউ ট্রাইবুনাল।
প্রথম সাক্ষাতকারের সময় আবেদনকারী ‘এ’-এর কাছে ডিপার্টমেন্টের অফিসার জানতে চান, তিনি আগের রাতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন কিনা। এ ছাড়া ‘বি’-এর সঙ্গে তিনি সর্বশেষ কবে, কখন এমন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। কিভাবে তারা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন তার বিস্তারিত জানতে চান ওই কর্মকর্তা। এমন কি কোন রুমে, কোনদিন কয়টার সময় তাদের এ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল এবং তার স্থায়িত্ব কতক্ষণ ছিল তাও জানতে চান তিনি। ওই অফিসারের সরাসরি প্রশ্ন ছিল, এ সম্পর্ক কি কয়েক মিনিটেই শেষ হয়ে গিয়েছিল? নাকি বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল? ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা। তারা কি কনডম ব্যবহার করেছিলেন কিনা।
এরপরে ওই অফিসার তাদের কাছে যে প্রশ্ন করেন এবং যেসব ভাষায় তথ্য জানতে চান, যেসব বিষয় নিয়ে জানতে চান তা এখানে পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা অশালীন বলে মনে হয়। শেষ দিকে ওই অফিসার তাদের কাছে জানতে চান, তারা কি যৌন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছে কিনা।
একই দিন সকালে ওই একই অফিসার সাক্ষাতকার নেন আবেদনকারী ‘বি’র। তার কাছেও তার যৌন জীবন নিয়ে একই রকম প্রশ্ন করেন। এক পর্যায়ে তার কাছে জানতে চান, যৌন সম্পর্কের সময়ে এমন কোনো ঘটনা কি ঘটেছে যার জন্য তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লিনিকে যেতে হয়েছিল। এর পরেই আরো নোংরা ভাষা ব্যবহার করেন। আরো অমার্জিত ইস্যুতে কথা বলেন ওই কর্মকর্তা। এরপর তিনি তাদের ‘প্রকেটশন ভিসা’ প্রত্যাখ্যান করেন।
তবে ২০১৪ সালে রিভিউজি রিভিউ ট্রাইবুনাল ওই অফিসারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে। সেখান থেকে আবেদন পাঠিয়ে দেয়া হয় সরকারের কাছে। এই ট্রাইবুনাল ওই অফিসারের সাক্ষাতকার নেয়ার ধরণের কড়া নিন্দা করে। অস্ট্রেলিয়ায় এলজিবিটি সম্প্রদায়ের পরবর্তী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনা ব্রাউন বলেছেন, এই জাতীয় যৌনতা বিষয়ক রগরগে প্রশ্ন করা হতাশাজনক।