মজুরি কাঠামো নিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে তাদের বেতন ও কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) নেতারা। গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বিজিএমইএ’র নেতারা।
এতে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, আতিকুল ইসলাম, সহসভাপতি ফারুক হাসান, মোহাম্মদ নাছির।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কর্মস্থলে ফিরে যান, উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করুন। সোমবার থেকে যদি আপনারা কাজে যোগ না দেন, তাহলে আপনাদের কোনো মজুরি দেয়া হবে না (নো ওয়ার্ক, নো পে)। শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা অনুযায়ী কারাখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, মজুরি কাঠামোর ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডে যদি কোনো সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা বিবেচনার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছে সরকার গঠিত ত্রি-পক্ষীয় কমিটি। শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের মেনে নিতে হবে। এর পরও যদি কেউ কাজে যোগ না দেয়, তাহলে শ্রমআইন অনুযায়ী তাদের বেতন দেয়া হবে না।অনেক কারখানায় নতুন মজুরি কার্যকর না করার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যেসব কারখানায় মজুরি কাঠামো বস্তবায়ন হয়েছে, সেখানেই বিক্ষোভ হচ্ছে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ও বিদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের পোশাক খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আমরা বিশ্ব বাজারে এগিয়ে যেতে না পারি।
শ্রমিক বিক্ষোভের পেছনে কারা আছে, তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার। এরা দেশীয় হতে পারে, বিদেশিও হতে পারে। এসব ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের জন্য একটি ঘণ্টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পোশাক খাত দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এই খাতে শান্তি আনার জন্য সরকারের প্রতি আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। যখনই আমরা উপরে ওঠার চেষ্টা করি, তখনই একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, চলতি বছর আমাদের পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষমাত্রা ৪০ বিলিয়ন ডলার হওয়ার কথা। কিন্তু ওই মহলটি বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় সরকারের কাছে যানমালের নিরাপত্তা চান তিনি। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা শ্রমিকদের অনুরোধ করেছিলাম কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। নতুন মজুরি কাঠামোয় বৈষম্য আছে এই উস্কানি দিয়ে পোশাক খাতের শ্রমিকদের অশান্ত করা হচ্ছে, শিল্পকে অগ্নিগর্ভা পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। সমস্যা সমাধানে সরকার গঠিত ত্রি-পক্ষীয় কমিটি কাজ করছে। কমিটি মজুরি কাঠামোর কোথাও ব্যত্যয় হলে তার পুনর্বিবেচনা করবে। তার জন্য আন্দোলন, ভাঙচুর করার প্রয়োজন নেই।
অনুষ্ঠানে টঙ্গীর এক কারখানার মালিক মো. ইকবাল হোসেন জানান, চলমান শ্রমিক আন্দোলনে তার প্রতিদিন ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।