চট্টগ্রাম পর্বেই মিলেছে বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের শেষ চারের তিন দল। এবার শেষ দল হিসেবে কারা আসছে সেটাই দেখার পালা। ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে এই দৌড়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী কিংস। লীগ পর্বে মেহেদী হাসান মিরাজের দলের আর কোনো ম্যাচ বাকি নেই। তবে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ৫ম দল ঢাকা ডায়নামাইটসের আছে দারুণ সুযোগ। শেষ দুই ম্যাচ জিতলেই ১৪ পয়েন্ট নিয়ে নিশ্চিত করবে শেষ চারে খেলা। সেই হিসাবে গেল আসরের রানার্সআপদের এখন টিকে থাকার লড়াই। সাকিব আল হাসানের ঢাকা সেই টিকে থাকার লড়াইয়ে মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। এরই মধ্যে ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা নিশ্চিত করেছে শেষ চারে খেলা।
তাদেরও বাকি দুই ম্যাচ। জয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকেই নিশ্চিত করবে লীগ পর্বে খেলা। তাই ভিক্টোরিয়ান্সদের জন্য আজ শীর্ষে ওঠার লড়াই। টানা চার হারে বিপর্যস্ত সাকিবের দলের সামনে আজ শুধু টিকে থাকাই নয় কুমিল্লা বিপক্ষে প্রতিশোধের লড়াইও। এই আসরে দুই দলের প্রথম দেখাতে ঢাকা হেরেছিল ৭ উইকেটে। তাই প্রথম দেখায় জয়ের কারণে কুমিল্লাও থাকবে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। দুপুর ২টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
চলতি আসরে সাকিবের ডায়নামাইটস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হুঙ্কার দিয়ে মাঠে নেমেছিল। শুরুতেই টানা চার ম্যাচ জিতে সব দলেরই ভিত কাঁপিয়ে দেয়। দলের দেশি-বিদেশি সব ক্রিকেটাই দারুণ ফর্মে ছিল। কিন্তু নিজেদের মাঠ ছেড়ে সিলেটে গিয়েই দেখে প্রথম হারের মুখ। আসরের ছোট দল হিসেবে পরিচিত রাজশাহী কিংসের সঙ্গে হেরে যায় ২০ রানে। এরপর সিলেটকে হারিয়ে জয়ে ফিরলেও পরের ম্যাচেই হেরে যায় চিটাগং ভাইকিংসের সঙ্গে। সেই থেকে শুরু ঢাকার পতন। একে একে তিন ম্যাচ হারের পর চতুর্থ ম্যাচে ভাইকিংসদের সঙ্গে দ্বিতীয় দেখাতেও জিততে পারেনি দল। টান চার হারের কারণ দলের দেশি-বিদেশি সব ক্রিকেটার পারফরম্যান্সে না থাকা। যদিও দুই একজন ব্যাটে-বলে অবদান রেখেছে। কিন্তু দল হিসেবে যেন ঢাকা খেই হারিয়ে ফেলেছে।
দলের ওপেনার হিসেবে দারুণ শুরু করা হযরতউল্লাহ জাজাই শেষ দিকে এসে দলেই জায়গা পাননি। দুই ফিফটিতে ৭ ম্যাচে তিনি করেন ১৬৪ রান। তবে অধিনায়ক সাকিব শুরুটা ভালো না করলেও শেষে এসে জ্বলে উঠেছেন। শেষ ম্যাচে এই আসরের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়েও দলকে জয় এনে দিতে ব্যর্থ হন। ১০ ম্যাচে করেছেন ২৬৭ রান। একই সমান ম্যাচে ২৫৫ রান করেছেন অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। ওপেনার সুনীল নারিন করেছেন ১৭৫ রান ১০ ম্যাচে। তবে পোলার্ড এখনো নিজের সেরাটাই দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ১০ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৪৫ রান। মূলত বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ঢাকার মূল ভরসা পোলার্ড, রাসেল ও সুনীল নারিন। এই তিন ক্যারিবীয় জ্বলে উঠলেই ঢাকাকে ঠেকানো কঠিন। তবে দেশিদের মধ্যে দারুণ করছেন রনি তালুকদার। ১০ ম্যাচে ২ ফিফটিতে করেছেন ১৯৫ রান। অন্যদিকে বোলিংয়ে সাকিব ১৭, নারিন ১১, রাসেল ১২ উইকেট নিয়েছেন। বলতে গেলে এই তিনজনই ঢাকার বোলিংয়ে ভরসা। এছাড়াও দেশি রুবেল হোসেনও ১০ উইকেট নিয়ে দারুণ ভূমিকা রাখছেন।
অন্যদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১০ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ৭ জয়। এর মধ্যে ঢাকাও তাদের শিকার। আজ দ্বিতীয় দেখায় ইমরুলের দলের লক্ষ্য নিজেদের শীর্ষে উঠার পথে জয় তুলে নেয়া। আসরে কুমিল্লার শুরুটা ভালো না হলেও শেষদিকে এসে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দলের ক্যারিবীয় ঝড় ইভেন লুইস সেঞ্চুরি করার পর ফিরেছে স্বস্তি। এছাড়াও পেরেরা ও শামসুর রহমান রানের চাকা সচল রেখেছেন। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালও ফিরেছেন ফর্মে। ১০ ম্যাচে শুরুটা ভালো না করলেও শেষ পর্যন্ত ২ ফিফটিতে করেছে ২৭১ রান। অধিনায়ক ইমরুল কায়েসও প্রায় প্রতি ম্যাচে ব্যাট হাতে ছোট ভূমিকা রাখছেন। এছাড়াও ব্যাট-বলে ভরসা শহীদ আফ্রিদি দারুণ ভূমিকা রাখছেন। বল হাতে ওহাব রিয়াদ ও ডেসন আছেন দারুণ ফর্মে। সব মিলিয়ে ঢাকার জন্য আজ কোনোভাবেই কুমিল্লা জয় সহজ হবে না।
তালিকার শীর্ষে চোখ ভাইকিংসের
চিটাগং ভাইকিংস বিপিএলে ঢাকার শেষ পর্বে মুখোমুখি সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে শীর্ষে উঠার লড়াইয়ে। ১১ ম্যাচ সেখানে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ভাইকিংস নিশ্চিত করেছে শেষ চারে খেলা। আজ যে দল জিতবে উঠে যাবে শীর্ষে। তবে তাদেরও ছাড়ানোর সুযোগ আছে কুমিল্লার সমানে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুশফিকুর রহীমের দল আছে বেশ চনমনে। শেষ ম্যাচে তারা হারিয়েছে আসরের অন্যতম শক্তিশালী দল ঢাকাকে। অধিনায়ক নিজেই ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশি-বিদেশি সব ক্রিকেটারই আছে ফুরফুরে মেজাজে। অন্যদিকে সিলেট এরই মধ্যে আসর থেকে ছিটকে পড়েছে। ১১ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট পাওয়া দলটির আর কোনো সুযোগ নেই। তবও শেষ ম্যাচে শেষ কামড় দিতে পিছপা হবে না তারা।