শেখ হাসিনার নজিরবিহীন নির্বাচনী সফলতা তাকে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এনেছে। এর ফলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে শুধু স্থিতিশীলতায় অব্যাহত থাকবে না, ভারত এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে সাব-রিজিওনাল পার্টনারশিপের একটি বৃহত্তর দ্বারও উন্মুক্ত হবে। এটি পর্যায়ক্রমে ঢাকা ও বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের জাতিগুলোর জন্য নতুন একাধিক অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বছরের পর বছর সামরিক বা সেনা-সমর্থিত এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন মৌলবাদী শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট সরকারের শাসন আমলে তীব্র অর্থনৈতিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া বাংলাদেশের নজিরবিহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাক্ষী ছিল গত দশকটি। এমনকি হাসিনা সরকারের শাসন আমলের সমালোচকরা একমত হবেন যে, গত দশকে অর্জিত ৭% প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
অর্থের প্রকৃত বা ভার্চুয়াল মুভমেন্টের দিক দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোর একটি হলো ঢাকা। এর আছে একটি দ্রুত উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগোষ্ঠী, যাদের খরচের ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
অর্থনীতি এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ(এফডিআই)
বর্তমানে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশের তালিকায় ৪২তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে ফিলিপিন্স, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে দেশটি এই তালিকায় ২৬তম স্থান দখল করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক ‘হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন’র (এইচএসবিসি) একটি প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং কোম্পানি ‘গোল্ডম্যান সাচ’ একবিংশ শতকে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হতে প্রস্তুত ১১টি দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশকে। এই তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো পাকিস্তান, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, মিশর, নাইজেরিয়া ও মেক্সিকো। ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত চারটি দেশের (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) পরেই এই ১১টি দেশের অবস্থান।
অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। ১৯৭৫ সালে হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরে সৃষ্ট অধঃপতন ও অচলাবস্থার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১) ছিল এই অগ্রগতির প্রস্তুতিকাল। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসা বিএনপি-জামায়াত জোটের পূর্ণ পাঁচ বছরের শাসনামলের সহিংসতা, দুর্নীতি, ধর্মীয় চরমপন্থা এবং জঙ্গিবাদ অগ্রগতির এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
এরপর ২০০৮ সালে হাসিনার দল ‘দিন বদলের সনদ-ভিশন ২০২১’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে দলটি। সব প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
এই মেয়াদে হাসিনা সব বড় শক্তির বিরোধিতাকে কলা দেখিয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়াই পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো দুঃসাহসিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তথ্য মতে, বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বগতিতে আস্থা আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও।