এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিন গতকাল সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বাংলা ১ম পত্র এবং মাদরাসা বোর্ডে কুরআন মাজিদ পরীক্ষায় ১০৩৮৭ জন অনুপস্থিত ছিল। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছে ২৪ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অনুপস্থিত এবং বহিষ্কারের দিকে শীর্ষে ছিল মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে অনুপস্থিত ৩৭৮৮ জন আর
বহিষ্কার হয়েছেন ৬ জন পরীক্ষার্থী। এরপরই কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে অনুপস্থিত শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৬২১ জন, বহিষ্কারের সংখ্যা ১৩ জন। তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড, এ বোর্ডের অনুপস্থিতির সংখ্যা ১৩৯৬ জন। এছাড়াও রাজশাহী বোর্ডে ৭৬২, কুমিল্লায় ৬৩১, যশোর ৪৬৩, দিনাজপুরে ৫৪১, সিলেটে ৩১৮, বরিশালে ৩৯০, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৪৭৭ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। সাধারণ ৮টি বোর্ডে ৫ জন শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে।এরমধ্যে ৩ জন বহিষ্কার হয়েছেন বরিশাল বোর্ড। এছাড়া ঢাকা ও দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে একজন করে বহিষ্কার হয়েছে। বাকি বোর্ডে কোনো শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়নি।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও সকালের পরীক্ষা ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট পরীক্ষার্থী ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪১১ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন। সারাদেশে ২৮ হাজার ৬৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ৩ হাজার ৪৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে কেন্দ্র রয়েছে আটটি, যেখানে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৪৩৪ জন।
এদিকে প্রথম দিন পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল সকালে রাজধানীর আশকোনায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সারাদেশে নকলমুক্ত পরীক্ষা আয়োাজনে তীক্ষ্ম গোয়েন্দা নজরদারি বসানো হয়েছে। তাই কোনোভাবে প্রশ্নফাঁস করা সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নবাক্স খোলা হয়েছে। সারাদেশে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারে মোড়ানো প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পূর্বের চাইতে এবার আমরা আরও কঠোর অবস্থানে রয়েছি। তাই প্রশ্নফাঁস বা তার গুজব ছড়ালে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়বে।। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এমন ন্যক্কারজনক কাজের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে কেউ রেহাই পাবে না। প্রশ্নফাঁসের গুজবকারী কয়েকজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে তাদের ওপর নজরদারি বসানো হয়েছে। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করবে। তাই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে সকল অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তা চান শিক্ষামন্ত্রী। এর আগে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে উত্তরা পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও দপ্তর প্রধানরা।
এদিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ না পাওয়া গেলেও পরীক্ষা চলাকালেই পরীক্ষাটির বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্ন এবং সৃজনশীল প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা শেষে আসল প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়ার বহু নির্বাচনী প্রশ্নের মিল না পাওয়া গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ফেসবুকের ‘ংংপ ধষষ নড়ধৎফ য়ঁবংঃরড়হ ড়ঁঃ ২০১৯-?১০০%্থ নামের একটি পেজে গতকাল সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। এ পোস্টগুলো ছিল বেশ ঝাপসা। অন্যদিকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষাটির সৃজনশীল প্রশ্নের ৩নং সেটের প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। বহু নির্বাচনী প্রশ্নের সঙ্গে অসল প্রশ্নের মিল পাওয়া না গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে অর্থাৎ সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশ করার জন্য কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র সচিব এবং পরীক্ষায় ডিউটির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা পরীক্ষার কেন্দ্রেই অবস্থান করবেন। জরুরি যোগাযোগের জন্য শুধু কেন্দ্র সচিব একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন, তাও তাতে ক্যামেরা থাকা যাবে না। এছাড়া শিক্ষার্থী ও ডিউটি শিক্ষকরা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। এমন সব কড়া নির্দেশনার পরও পরীক্ষা চলাকালে কীভাবে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে আসল তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় সাব কমিটি ও চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, প্রশ্নফাঁস অথবা কোনো ধরনের প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই। ফেসবুকে প্রশ্ন পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সম্ভব নয়। যদি পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্ন ফেসবুকে আসে তবুও সেটা আসল নাকি নকল তা দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিয়ম আছে, কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ১ ঘণ্টা পরেই সে চাইলে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে পারবে। হয়তো এমনটিই হয়েছে। কোনো পরীক্ষার্থী ১ ঘণ্টা কেন্দ্রে ছিল, পরীক্ষা দিয়েছে, বের হয়ে এসে সেই প্রশ্নের ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছে। কত রকম দুষ্ট চক্র যে আছে সবাইকে তো ধরতে পারব না। জিয়াউল হক বলেন, তবে আজই হয়তো আমরা একটা নির্দেশনা দেব, কেউ ১ ঘণ্টা পরীক্ষায় এটেন্ড করে যদি বের হয়ে যেতে চায় তাহলে তাকে প্রশ্ন কেন্দ্রে জমা রেখে আসতে হবে।