শীতের সন্ধ্যায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল চার-ছয়ের বৃষ্টি। তাতেই দারুণ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ফাইনাল জুড়ে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ষষ্ঠ আসরে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ১৭ রানে জয় নিয়ে নয়া অধিনায়ক হিসেবে ইমরুল কায়েসের হাতে উঠে কুমিল্লার দ্বিতীয় শিরোপা। টসে জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করেন ভিক্টোরিয়ান্সের ওপেনার তামিম ইকবাল। ব্যাটে ঝড় তুলে বিপিএলে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন। মাত্র ৫০ বলেই চতুর্থ দেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৬১ বলে ১৪১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।তাতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রানের পুঁজি পায় ভিক্টোরিয়ান্সরা। জবাব দিতে নেমে দলের স্কোর বোর্ডে কোন রান যোগ না হতেই রান আউট হন ঢাকার ক্যারিবীয়ান ওপেনার সূনীল নারিন। সেই ধাক্কা সামলে দারুণ জুটি বাঁধেন রনি তালুকদার ও উপল থারাঙ্গা। পাওয়ার প্লেতে ৭১ রান তোলে এই জুটি। ১০২ রানের সময় থারাঙ্গা ৪৮ রানে থামেন। এরপর দলের আশা জাগিয়ে রনিও ৬৬ রানে আউট হন। তার বিদায়ের পর ঢাকার হার বাঁচাতে আর কেউ দাঁড়াতে পারেনি। তাদের ইনিংস থামে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮২ রানে। ম্যাচ সেরা হন তামিম।
ম্যাচ শেষে ইমরুল কায়েস বলেন, তামিম গ্রেট ক্রিকেটার। আজ সে তার ক্লাস দেখিয়েছে। এ ইনিংস দীর্ঘদিন ধরে মনে থাকবে। তামিম বলেন, বেশ কয়েকটি ম্যাচে আমি ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারছিলাম না। কে জানে, হয়তো ফাইনালের জন্যই সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলাম। টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব।
২০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঢাকার পক্ষে থারাঙ্গা আর রনি ছাড়া সবাই ব্যর্থ। থারাঙ্গা যখন আউট হন দলের স্কোর বোর্ডে ১০২ রান। এরপর লড়াই করতে থাকেন রনি। কিন্ত তাকে সঙ্গ দিতে এসে ৩ রান করে আউট হন অধিনায়ক সাকিব। বড় ধাক্কা আসে ৩৮ বলে ৬৬ রান করে রনি রান আউট হলে। তার ইনিংসে এসেছে ৬টি চার ও ৪টি ছয়ের মার।
মাত্র ১৯ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে খেই হারায় ঢাকা। সেখান থেকে পথ দেখাতে এসে আরো বড় বিপদ ডেকে আনেন আন্দ্রে রাসেল। ৪ রান করে আউট হন তিনি। বলতে গেলে ঢাকার টপ ও মিডল অর্ডারের চার সেরা ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন ২ অংক না ছুঁয়ে। দলীয় ৪১ রানের সময় আউট হন ঢাকার আরেক ক্যারিবীয় ভরসা পোলার্ড। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। দলের স্কোর বোর্ডে আরো দুটি রান যোগ হতেই আউট হন শুভাগত হোম। সেখান থেকে লড়াই করতে থাকেন উইকেট কিপার-ব্যাটসম্যান নূরুল হাসান সোহান। কিন্তু তিনিও হাল ছাড়েন ১৫ বলে ১৮ রান করে। শেষ দিকে ৮ বলে ২ ছক্কায় ১৫ রান করে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরিয়ে আউট হন মাহমুদুল হাসান। ঢাকা ম্যাচ হারে ১৭ রানে।
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দলের ৯ রানের সময় কুমিল্লার ওপেনার ক্যারিবিয়ান এভিন লুইস আউট হন। ঢাকার দর্শকরা তখন উল্লাসে মাতোয়ারা। দ্বিতীয় ওভারেই রুবেল হোসেনের বলে এলব্লিউ হন লুইস। কিন্তু সেখান থেকে এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তামিম। ১০ ওভার শেষেও কুমিল্লার সংগ্রহ ১ উইকেট হারিয়ে ৭৩ রান। ঢাকার ফিল্ডারের ভুলে দুবার করে জীবন পান তামিম। ২৪ রানে বিজয় ও ৩৪ রানে তামিমের ক্যাচ ছাড়েন সোহান। দু’বার জীবন পেয়ে ৩১ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন তামিম। এরপর ঢাকার বোলারদের উপর আরো চড়াও হন দেশ সেরা এই ওপেনার। রুবেল হোসেনের করা ১৫তম ওভারে ২ চার ও ২ ছক্কায় করেন ২৩ রান। আন্দ্রে রাসেলকেও ছাড় দেননি তামিম। তার করা ১৭তম ওভারেও ২ চার ও ২ ছক্কা হাকান এই ওপেনার। এরপর ৯৩ রানে দাড়িয়ে এক ছক্কা ও চারে ৫০তম বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। তার শেষের ৫০ রান আসে মাত্র ১৯ বলে।
৬১ বলের ইনিংসে ১১টি ছক্কা আর ১০টি চারের মার হাঁকান তামিম।
তার সঙ্গে ১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। কুমিল্লার স্কোর ১৯৯ হলেও তামিম ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যানই সুবিধা করতে পারেনি। ইমরুল ১৭ রান করেছেন ২১ বলে। ৩০ বলে ২৪ রান করেছেন এনামুল হক বিজয়। বিপিএলের ফাইনালে এটি কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয় এই আসরে যে কোন ব্যাটসম্যানের মধ্যে তামিম খেলেছেন সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। সব মিলিয়ে বিপিএলের চলতি আসরে ছিল এটি ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি। এখন পর্যন্ত আগের ৫ আসরে সব মিলিয়ে সেঞ্চুরি সংখ্যা ছিল ১২ টি। তামিম ছাড়াও দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিপিএলে সেঞ্চুরি আছে শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল ও সাব্বির রহমানের।
বিপিএলে প্রথম দুই শিরোপার মালিক ছিল ঢাকা গ্যালাডিয়েটরস।
এরপর তৃতীয় আসরে নয়া দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স হয় চ্যাম্পিয়ন। চতুর্থ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় সাকিবের ঢাকা। আর ৫ম আসরে সেই শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছিল রংপুর রাইডার্স।