বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন ময়ুরী বেগম। এখন ঠিকমতো তিনি শুনতেও পান না। অন্ধ হয়ে গেছে বাম চোখ, কথা বলার মতো শক্তিও তার নেই। শতবর্ষী হতভাগ্য এই বৃদ্ধার বাস টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নের মনতলা গ্রামে।
১৬ বছর আগে স্বামী আজমত আলীকে হারিয়েছেন ময়ূরী বেগম। এরপর মায়ের আরও কোন খোঁজ-খবর নেয় না দুই ছেলে হামিদ ও হযরত আলী। ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন হামিদ আর অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করেন হযরত আলী। হযরতের স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করেন।
তবে সন্তানরা না দেখলেও শতবর্ষী ময়ূরী বেগমকে ফেলে দিতে পারেননি কৃষিকাজ করে খাওয়া নাতি রমজান ও মজিবুর। তাদের সহযোগিতায় কোনো রকমে বেঁচে আছেন তিনি।
অন্যদিকে এই বয়সে এসেও ময়ূরী বেগমের কপালে জোটেনি বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার মতো সরকারি কোন অনুদান।বয়স্ক ভাতার জন্য বার বার চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে গেলেও ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বারান্দার এক কোণে ধূলো মাটির ওপর শুয়ে আছেন ময়ূরী বেগম। শরীরের চামড়া লেগে গেছে হাড়ের সঙ্গে। চোখ দিয়ে অবিরত পানি ঝরছে।
ময়ূরী বেগম বলেন, আমারে একখান টেহার কাট কইরা দিবা (বয়স্ক ভাতার কার্ড) বাবা? মেলা কষ্টে বাঁইচা আছি। মেলা গেছি চেরম্যান (চেয়ারম্যান) মেম্বরের (মেম্বার) কাছে। তারা কয় আমরা নাহি (নাকি) দনী (ধনী) মানুষ। আমাগো একটা টিবল (টিউবওয়েল) নাই পায়খানাও নাই। একটা কিছু কইরা দেও বাবা।
উইজডম ভ্যালি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. কামাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন এই টাইপের সংবাদে হবে তাতে আমরা খুশি হতে পারলাম না। আমরা দেখতে চাই, স্থানীয় চেয়ারম্যান লজ্জাবনত মুখে হাস্যোজ্জ্বল ময়ূরী বেগমের হাতে ভাতার কার্ড তুলে দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একাব্বর হোসেন বলেন, সে আমার কাছে আসে নাই। আসলে তার জন্য একটা ব্যবস্থা করবো আমি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, বয়স্ক ভাতার জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তালিকা করে আমাদের কাছে জমা দেন। সেই অনুসারে আমরা কাজ করি। আমি যেহেতু জানতে পারলাম, অবশ্যই ময়ূরী বেগমকে বয়স্ক ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করবো।