সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারের অনীহা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এজন্য তিনি নিজেদের মধ্য থেকেই বাংলা ভাষা ব্যবহারের সংসদের সকল কার্যক্রম বা কার্য পরিচালনায় বাংলা বর্ষপুঞ্জি বঙ্গাব্দ প্রচলন করার প্রস্তাব করেছেন। গতকাল সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এই প্রস্তাব করেন তিনি। পয়েন্ট অব অর্ডারে ফজলে নূর তাপস বলেন, আজ ১৬ ফাল্গুন ১৪২৫ বঙ্গাব্দ, ইংরেজি ২৮ ফেব্রুয়ারি।
ফেব্রুয়ারিকে ভাষার মাস হিসেবে পালন করি, ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করি। ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে পালন করি এবং সারা মাসব্যাপী ভাষার সম্মান-মর্যাদা রক্ষার কথা বলে থাকি,কিন্তু আসলেই কতটুক করেছি এবং কতটুক অবদান রাখছি? তিনি বলেন,ভাষার অধিকার, ভাষার মর্যাদা, সম্মান রক্ষার লক্ষ্যে ভাষা শহীদরাই প্রাণ দেননি, জাতির পিতা দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন। অগণিত ভাষা সৈনিকেরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন।ধীরেন্দ্র নাথদত্তসহ অনেকেই তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ১৯৭১ সালের পূর্বে হাজার বছর ধরে আমরা পরাধিন জাতি ছিলাম। কিন্তু সেই হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের ভাষা সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে লালন করেছি, ধারণ করেছি এবং শত আগ্রাসনকে প্রতিহত করে বাঙালি জাতির সত্তাকে জাগ্রত রেখেছি। কিন্তু দু:খের সাথে বলতে হয়। একটি স্বাধীন জাতি হয়েও ১৯৭৫ সালে পর থেকে মাত্র ৪৪ বছরে আমরা আমাদের সেই স্বকীয় সত্তা আজকে হারাতে বসেছি। আমরা আমাদের ভাষাকে রক্ষা করতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যাপারে খুব উদ্বিগ্ন। তিনি অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছেন, কিন্তু তারপরেও আমরা কেমন যেন পেরে উঠছি না। এরজন্য আমি মনে করি, আমরাই দায়ী।
এসময় তিনি উদাহরণ টেনে স্পিকারের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতীয় দৈনিকগুলো দেখেন, তাদের প্রতিবেদেনে অযথা ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করছে। টিভি গণমাধ্যমগুলোতেও ইংরেজী শব্দের মিশ্রণে যেমন করে সংবাদ পরিবেশন করছেন। বিজ্ঞাপনগুলো অযথা বিভিন্ন প্রকার ইংরেজি শব্দ প্রচার করছেন। আমরা ইংরেজি শিখেছি। যাতে করে বৈশ্বিক সমাজে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, আমরা কোনো কাজে পিছিয়ে না পরি। কিন্তু এখন প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করছি সমাজে সেই প্রতিযোগিতায় আমরা একটি বাক্য পরিপূর্ণভাবে বাংলায় বলতে পারি না। না হয় সম্পূর্ণরুপে বাংলা, না হয় ইংরেজি কেমন যেন একিটি মিশ্রণ। তাই শুরুটা আমাদের নিজেদের দিয়েই করতে হবে। তিনি বলেন, আমার দাদী সবসময় বাংলা বর্ষপুঞ্জি বলতেন, কিন্তু আজ সেই প্রচলন হারাতে বসেছি। আমরা জানি না আমাদের নাতিদের বাংলা বর্ষপুঞ্জি আদৌ জানাতে পারব কি না? শিখিয়ে যেতে পারব কি না?
সরকারি কাগজপত্রগুলো আন্ষ্ঠুানিকভাবে শব্দ ব্যবহার করে থাকে বঙ্গাব্দ। তাই এই সংসদের কার্যক্রম বা কার্য পরিচালনায় বাংলা বর্ষপুঞ্জির ব্যবহারের অভাব রয়েছে। তাই আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সংসদের কার্যক্রমে বাংলা বর্ষপুঞ্জি বঙ্গাব্দ প্রচলন করার জন্য। তবে কেউ যদি তাদের বক্তব্যে ইংরেজি ভাষাসহ অন্য শব্দ ব্যবহার করেন তাহলে কার্যক্রমে যেন সেই শব্দটির পরিবর্তে বাংলা শব্দটি সন্নিবেশ করা হয়।
তার বক্তব্যের সমর্থন করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন করেছিলাম। সেই বাংলা ভাষা বাস্তবায়ণ আইনে আছে রাষ্ট্রীয় কাজে স্বীকৃত ইংরেজি ছাড়া অন্য কোথাও বাংলা ব্যবহার করা হলে সাজা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সরকারই সেই বাংলা ভাষা ব্যবহারের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন বা সাজা হয়েছে এরকম কোনো রেকর্ড নেই। সবচেয়ে বড় কথা ১৯৯১ সালে হাইকোর্টের একটি রিট এ বলা হয়েছে সংবিধানে রাষ্ট্রের ভাষা বাংলা, কিন্তু আমাদের উচ্চ আদালতে বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাই চলবে। সিভিল কোর্টে লেখা আছে আদালতের ভাষা বাংলা এবং ইংরেজি হবে। এই সিপিসি’র ওই সেকশনের কারণে উচ্চ আদালত ওই রায় দিয়েছেন। যদি সিপিসি সংশোধন করা হয় তাহলে রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলা ভাষা ব্যবহার সহজ হবে।