পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা উচ্ছেদের পঞ্চম দিনে গতকালও অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টাস্কফোর্স। তবে, অভিযানের শুরুর দিন থেকেই এলাকাবাসী ও রাসায়নিক পণ্যের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের। এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, উচ্ছেদ অভিযান চালানোর আগে তাদের কোনো সময় দেয়া হয়নি । গুদাম থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে সময় দেয়ার আহ্বান জানান তারা। আবার অনেক ব্যবসায়ী সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবসা করার জন্য আলাদা গুদাম বা কারখানার জায়গা দেয়ার দাবিও করেছেন। তবে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কর্মকর্তারা বলেছেন, জানমালের নিরাপত্তায় জনবহুল এলাকায় কোনোভাবেই রাসায়নিকের গুদাম রাখা যাবে না। পুরান ঢাকাকে রাসায়নিক গুদামমুক্ত করতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে টাস্কফোর্স।
এদিকে, টাস্কফোর্সের অভিযানে বেশিরভাগ রাসায়নিকের গুদাম পাওয়া গেছে পুরান ঢাকার আবাসিক ভবনগুলোতে।যেখানে একসঙ্গে মানুষ ও রাসায়নিকের অবস্থান দেখা গেছে। অভিযানে এসব গুদাম ও কারখানার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ভবনের আবাসিক ফ্ল্যাটে থাকা বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। অধিকাংশ বাসা ও কারখানার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ একই লাইনে থাকায় আবাসিকের বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় চকবাজারের আজগর লেনের তিনটি বাসায় দুই দিন ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন না সেখানকার বাসিন্দারা। এখানকার তিনটি বাসায় মোট ২৭টি পরিবার বাস করছে। একটি বাসার ভাড়াটিয়া নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাসায় একটি প্লাস্টিকের গুদাম ছিল। দুই দিন আগে উচ্ছেদ অভিযানে এই গুদামের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গুদাম আর বাসার সব সংযোগ একসঙ্গে থাকার কারণে আমরা অন্ধকারে বসবাস করছি।
গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে বকশিবাজারের জয়নাগ রোডে অভিযান শুরু করে টাস্কফোর্সের একটি দল। অভিযানের বিরোধিতা করে শুরুতেই বিক্ষোভ করেন প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা। অভিযানের শুরুতেই বকশিবাজারের জয়নাগ রোডে ১১/১সি নম্বর বাসায় প্লাস্টিক দানার কারখানা ও গুদাম পাওয়া যায়। পরে কারখানাসহ পুরো ৭তলা ভবনের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টাস্কফোর্স। একই রোডের আরো একটি বাসার নিচতলায় প্লাস্টিক দানার কারখানা থাকায় সেখানেও বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। দু’টি বাসার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরপরই প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা সম্মিলিতভাবে অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ থেকে তারা অভিযানবিরোধী নানা স্লোগান দেন। প্লাস্টিক ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, পুরান ঢাকায় যেসব দাহ্য পদার্থ রয়েছে সেগুলো সরান আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে, আমি জোর করে বলবো প্লাস্টিকের দানা দাহ্য পদার্থ নয়। যদি গোডাউন সরাতে হয় তাহলে আমাদের সময় দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়ির বাসিন্দাদের ভোগান্তিও মেনে নেয়া হবে না। আমরাও চাই পুরান ঢাকা থেকে সব দাহ্য পদার্থ সরানো হোক, তবে সেটা নিয়ম মেনে। কাউকে ভোগান্তিতে ফেলে নয়।
বকশিবাজার এলাকার বাসিন্দা রেশমা বেগম জানান, কেমিক্যালের কারখানা যেখানে আছে সেগুলো উচ্ছেদ করুক। প্লাস্টিক কারখানাও উঠায় দিতে হবে। আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। মফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, চুড়িহাট্টায় তো মানুষ হঠাৎ আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এখন আমাদের আগুন লাগিয়ে মরতে হবে। গত ২০ বছর ধরে এই এলাকায় আমি প্লাস্টিকের ব্যবসা করে আসছি। গতকাল (সোমবার) কোনো কিছু না জানিয়েই আমার গুদামটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমাকে কোনো সময়ও দিলো না। আমার এই ব্যবসার আয়েই পরিবার চলে।
এখন আমি কি করব? ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, গতকাল সকাল থেকে পুরান ঢাকার পাঁচটি এলাকায় এক সঙ্গে অভিযান শুরু করে টাস্কফোর্সের পাঁচটি দল। দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল বেলা সোয়া ১১টার দিকে বকশীবাজারের গির্দ্দা উর্দু রোডের ঢাকা টাওয়ারে অভিযানে যায়। হাজী আবুল হাসান টুটুল নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ৮তলা ওই ভবনের নিচ তলায় রাসায়নিকের গুদাম পাওয়ার পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় টাস্কফোর্স। পরে গির্দ্দা উর্দু রোডের ১০/এ নম্বর হোল্ডিং এবং জয়নাগ রোড ও হোসেনী দালানের তাঁতখানা লেইনে চলে অভিযান। অভিযান শেষে শরীফ আহমেদ বলেন, পাঁচটি স্থানে অভিযান চালিয়ে চারটি গোডাউনে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক দানায় আগুন লাগলে প্রচুর ধোঁয়া হয়, আর এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। ঝুঁকির কারণেই আবাসিক ভবনে কোনো গুদাম বা কারখানা রাখা যাবে না।