ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে হলে ভোট দেয়া নিয়ে ভয়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি-না সন্দেহে আছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, হলগুলো এখনো ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলে। হলগুলো পুরো নিয়ন্ত্রণ করেন তারা। ফলে ভোট দিতে গেলে বাধা দেয়ার শঙ্কা করছেন অনাবাসিক ছাত্রছাত্রীরা। অনেকে জাতীয় নির্বাচনের ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের মধ্যে শঙ্কাও আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, ভোটের দিন বহিরাগতরা ভিড় করতে পারে ভোট কেন্দ্রে।এতে সকালে দীর্ঘ মেকি লাইন হতে পারে। এতে সাধারণ অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা এসে ভোট দেয়ার বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন। হলের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী থাকেন, তারা হলের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত নয়। ফলে যেকোনো ভয়ভীতির কারণে তারা হলে ভোট দিতে নাও যেতে পারেন বলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে। মাত্র ৬ ঘণ্টা ভোট। এতে ডাকসুতে ২৫টি পদের বিপরীতে ২২৯ প্রার্থী রয়েছেন। ওএমআর ফরমে ক্রস বা টিক দিয়ে ভোট দিতে হবে। এক্ষেত্রে পছন্দের প্রার্থীর নাম খুঁজতে খুঁজতে একজন ভোটার ভোট দিতে অনেক সময় চলে যাবে। সঙ্গে হলের প্রার্থীও আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী হলের বাইরে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা সঠিক মতো এবং পছন্দের প্রার্থীদেরকে ভোট দিতে পারলে ফলাফল অন্যরকম হবে। যা ক্ষমতাসীনরা কল্পনাও করতে পারবে না। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এসএম কামরুজ্জামান। তিনি একজন অনাবাসিক শিক্ষার্থী। হলে থাকেন না। ডাকসু নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে পারবেন কিনা ভয়ে আছেন। ক্যাম্পাসে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বাধা সৃষ্টি করছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন। ২৮ বছর পর অধিকার ফিরিয়ে দেবে কিনা সন্দেহ এই শিক্ষার্থীর। ক্যাম্পাসের বটতলায় কথা হয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের অনাবাসিক শিক্ষার্থী সানজানার সঙ্গে। তিনি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। বাসায় থাকেন। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে এসেই ডাকসুতে ভোট দিতে পারবো কল্পনাই করিনি। এখন যদি ভোট সঠিক মতো দিতে পারি তাহলে ভালো লাগবে।
শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য এই ভোট খুবই দরকার ছিল। তবে এই নির্বাচন যাতে জাতীয় নির্বাচনের মতো না হয়, সেটাই ভয়। তিনি একজন ভালো প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চান। তিনি আরো জানান, ক্যাম্পাসে সব প্যানেলের প্রার্থীরাই তার কাছে ভোট চাচ্ছেন। একই ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের আরেক অনাবাসিক শিক্ষার্থী স্বর্ণা। তিনি শামসুন নাহার হলের অনাবাসিক ছাত্রী। তিনি বলেন, সব প্যানেলই ভোট চাচ্ছে। তবে সঠিকভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারা নিয়ে তার যথেষ্ট শঙ্কা আছে। প্রচারে ছাত্রলীগ এগিয়ে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ছাত্রদলকে কম দেখা যায়। স্বতন্ত্র ও অন্য প্রার্থীরাও ভালো প্রচার করছেন। একই ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে। অসম্ভব ভালো লাগছে। তবে নিজের ভোটটি সঠিকমতো পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারলে ভালো লাগবে।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনাবাসিক শিক্ষার্থী প্লাবন বলেন, এখন ক্যাম্পাসের পরিবেশ ভালো। ভোটের দিন কি হয়, তা নিয়ে ভয়ে আছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করেন তিনি। একই বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলুল হক মুসলিম হলের অনাবাসিক ছাত্র নাফিজ হোসেন বলেন, আশা করি ভালো নির্বাচন হবে। আমরা যারা হলে থাকি না তারা ক্যাম্পাসের একজায়গায় হয়ে জোট বেঁধে ভোট দেবো। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ই জুন ডাকসু নির্বাচন হয়। এরপর আগামী ১১ই মার্চ ডাকসু নির্বাচন।